পাট স্টক ব্যবসার আইডিয়া।

 আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। আপনারা যারা বেকার আছেন। বা ছোটখাটো চাকরি করতেছেন। অনেকের মনে স্বপ্ন থাকে ব্যবসা করে পরিবারের  পাশে দাঁড়াতে বাড়তি  ইনকাম করার জন্য। ব্যবসা করতে চান কিন্তু জানেন না কি ব্যবসা করবেন।আপনি চাইলে গ্রামে পাটের  ব্যবসা করতে পারেন।  তাই আজকে আমরা আলোচনা করব পাটের  ব্যবসা সম্পর্কে। 

প্রথমে আপনি জানতে হবে পাট কত প্রকার পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোথায় কোথায় পাট উৎপাদন হয়? পাটের ব্যবসা করতে হলে আপনাকে পাটের বাজার  সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করতে হবে। তারপর নার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি প্রত্যেকদিন পাট ক্রয় বিক্রয়  করবেন নাকি স্টক লোড করবেন। আপনি চাইলে প্রত্যেক দিন পাট ক্রয় বিক্রয় করতে পারেন এবং স্টক লোড করে রাখতে পারেন। প্রতিদিন ক্রয় বিক্রয় করলে পাটে সামান্য লাভ হবে ও স্টক লোড করলে অধিক পরিমাণ লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।আপনি যেহেতু পাটের ব্যবসায়  নতুন তাই আপনাকে প্রতিদিন ক্রয় বিক্রয়  করাই উত্তম ।সবচেয়ে ভালো হবে যে পাটের সাথে জড়িত বা অভিজ্ঞতা আছে এমন কাউকে নিয়ে পাটের ব্যবসা শুরু করলে  আপনার লসের  পরিমাণ কম হবে । 

পাটের ব্যবসার প্রাথমিক ধারনা। 

আপনার প্রথমে বাংলাদেশের পাটের বাজার সম্পর্কে ভালো করে ধ্যান  ধারণা নেয়া লাগবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাট উৎপাদন হয়। তার মধ্যে ফরিদপুর মানিকগঞ্জ গোপালগঞ্জ রাজবাড়ীতে প্রচুর পরিমাণ পাট উৎপাদন হয় । এসব জেলার বিভিন্ন হাট  বাজার থেকে আপনাকে পাট  সংগ্রহ করতে হবে। এসব জেলা গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন দিন হাট বার বসে। এখানকার হাট বাজার থেকে পাট সংগ্রহ করতে পারেন ।অথবা কৃষকের কাছ থেকে পাট  সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে আপনি বেশি লাভবান হবেন। তাছাড়া গ্রামে ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী পাওয়া যায় যারা অল্প পরিমাণ পাট ক্রয় করে হাটে বা বিভিন্ন ব্যবসায়ের কাছে বিক্রি করে থাকেন। তাদের সামান্য লাভ দিও আপনি তাদের কাছ থেকে পাট কিনতে পারেন। 

পাটের ব্যবসার স্থান নির্বাচন। 

যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে প্রথমে স্থান নির্বাচন করতে হবে। কারণ ব্যবসায় উন্নতির জন্য স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাটের ব্যবসা শুরু করার আগেও আপনাকে স্থান নির্বাচন করে নিতে হবে।পাটের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান হলো গ্রাম। পাট গ্রামে উৎপাদন হয়। এজন্য পাটের ব্যবসা শুরু করতে হলে গ্রামে একটি দোকান ভাড়া নিতে হবে। গ্রামে খুব সহজে পাটের ব্যবসা করতে পারবেন। আপনি যে ব্যবসা  করুন না কেন সেই পণ্য যদি হাতে নাগালে পাওয়া যায় তাহলে লাভ বেশী করা যায়।এজন্য গ্রামে পাটের ব্যবসা শুরু করতে হবে । 

মুলধন কত টাকা লাগবে? 

পাটের ব্যবসার জন্য প্রাথমিক একটি মূলধনে প্রয়োজন আছে। কত টাকা মূলধন নিয়ে আপনি  ব্যবসা শুরু করবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে? আমার মতে সর্বপ্রথম ছোট্ট মূলধন এই ব্যবসা করা উচিত। আস্তে আস্তে যখন আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে তখন আস্তে আস্তে মূল্য বাড়াবেন। বড় মূলধনের ব্যবসা করলে ব্যবসায় ক্ষতি সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনাকে প্রথম নির্বাচন করে নিতে হবে কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ করেন। ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই আগে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। তারপরও প্রথমে পাটের  ব্যবসা শুরু করতে হলে ২ লক্ষ টাকা  থেকে ৫ লক্ষ টাকা মূলধন নিতে হবে।আপনি চাইলে আরো কম বেশি নিতে পারেন 

পাটের মৌসুম।

আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস পাটের সিজন । এই সিজনে কম দামে পাট পাওয়া যায়। কৃষক তার চাহিদা মিটানোর জন্য এই ধরনের পাট বিক্রয় করে থাকেন। তাছাড়া সারা বছর কম বেশি পাট পাওয়া যায়। 

পাটের স্টক লোডের ব্যবসা। 

পাট   স্টক লটের  ব্যবসা করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ঘরভাড়া  নেয়া লাগবে। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস থাকে। এমন জায়গায় ঘর নিতে হবে যেখানে পোকামাকড়ের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। যেখানে বৃষ্টি পানি যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। তারপর ভালো করে সেই ঘরে স্প্রে করতে হবে  যাতে সেই করে ইদুর বা উইপোকা থাকতে না পারে। তারপর ভালো করে শুকনো পাট  ক্রয় করতে হবে। কোন প্রকার ভেজা পাট সংগ্রহ করা যাবে না। স্টক লটের জন্য সবসময় মাঝারি ধরণের পাট  ক্রয় করতে হবে। উন্নত মানের বা নিম্নমানের পাট ক্রয়  করা যাবে না।মাঝারি ধরনের পাটে বেশি পরিমাণ ব্যবসা হয়ে থাকে । যখন পাটের দাম বাড়বে তখন পাট বিক্রয় করে দিতে হবে। এভাবে করে পাটের  স্টক ব্যবসা করতে হবে। 

পাটের মিলের সাথে ব্যবসা।

পাটে বড় ধরনের ব্যবসা করতে চাইলে আপনি বিভিন্ন মিল  কারখানায় পাট  দিতে পারেন ।বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল কারখানায় পাট  দিয়ে বস্তা কার্পেট সুতা শপিং ব্যাগ লেডিস পার্স শোপিস ফুলদানি ফ্লোর ম্যাট  অল ম্যাট দোলনা পাটের  বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে থাকেন ।এসব  কলকারখানায়  মিল ফ্যাক্টরিতে পাটের  প্রচুর পরিমাণ চাহিদা রয়েছে ।এসব মিল  ফ্যাক্টরিতে আপনি পাট দিতে পারেন ।এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

পাট বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসা।

আপনি চাইলে বিদেশে পাট রপ্তানি করতে পারেন।কারণ বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে ।  বিশ্বের বাজারে  বাজারে বাংলাদেশের পাটের চাহিদা অনেক রয়েছে ।তাই আপনি চাইলে বিদেশে পাঠ রপ্তানি করতে পারেন ।  তার জন্য আপনার কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। প্রথমে আপনার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করা লাগবে। তারপর বিদেশের বায়ার  খুঁজে বের করতে হবে যারা বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি  করে ।এই ব্যবসার জন্য একটু পুঁজি  বেশি লাগে।বিশ্বের বাজারে পাট  রপ্তানি করতে গেলে ঝুঁকি একটু বেশি ও লাভের সম্ভাবনা বেশি ।তাই প্রথমে এই  ব্যবসা করা যাবে না তাহলে লসের  পরিমাণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনাকে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে  তারপরে  বিদেশে পাট রপ্তানি করতে হবে। 

পাট পণ্য তৈরি করে ব্যবসা।

আপনি চাইলে পাটের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রিক তৈরি করেও দেশে ও দেশের বাহিরে বিক্রয় করতে পারেন। পাটের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশ্বের বাজারে পাটের পণ্যের অনেক কদর রয়েছে। আপনি পাটের পণ্য তৈরি করে উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী পাটের মাধ্যমে আয় করতে পারেন ।পাটের বিভিন্ন ধরনের সৌখিন পণ্য কাপড় জুতা বাস্কেটবল  ওয়ালমেট টেবিল ম্যাট  পাপোশ দোলনা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশি বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সময়ে পাট বন্ধ প্রদর্শনীয় বাণিজ্য মেলা হয়ে থাকে। সেখানে আপনি এসব পাট  পণ্য বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

অল্প টাকায় পাটের ব্যবসা।

তাছাড়াও আপনি গ্রামের কৃষকের   কাছ থেকে   পাট ক্রয় করে বড় বড় ব্যবসায়ীর  কাছে বিক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার পুঁজির পরিমাণটা কম লাগবে। আপনি যে দামে পাট ক্রয় করবেন তার থেকে সামান্য কিছু লাভে বিক্রয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের ব্যবসা প্রতিদিন করতে পারবেন।

 পাটের ব্যবসায় লাভ -লস।

পাটের ব্যবসা শুরু করলে লাভ লস হবেই। কিন্তু পাটের ব্যবসা হলো লসের  সম্ভাবনা খুবই কম। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পাট কিনতে পারলে আপনি পাটের মণ প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হওয়ার সম্ভাবনা  আছে। আপনার লেবার খরচ গুদামখরচ ক্যারিং খরচসহ সবকিছু  বাদে আপনার লাভ লস হিসাব করতে হবে।আপনি অভিজ্ঞতা সম্পুর্ণ হলে মাসিক ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। পাট স্টক লোড করলে আরো বেশি আয়ের সম্ভাবনা আছে। 

পরিশেষে। 

আপনি যে ব্যবসা করেন না কেন প্রথমে আপনাকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।প্রথমে সামান্য পরিমাণ পুঁজিতে  ব্যবসা করতে হবে ।ব্যবসার প্রথমেই বড় ধরনের ঝুঁকি নেয়া যাবে না। যেকোনো ব্যবসার আগে তার ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। তারপর ব্যবসা ইনভেস্ট করতে হবে। কোন ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। যে ব্যবসায় শুরু করেন না কেন? প্রথমে দেখতে হবে আপনার লাভ কেমন হয় আপনার এই ব্যবসায় ভবিষ্যৎ কেমন? আপনি কি এই ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। আপনি বিচার বিশ্লেষণ করে যদি দেখেন এই ব্যবসায় ভবিষ্যৎ ভালো তারপরে ব্যবসা শুরু করবেন। 

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন