বর্তমান বিশ্বে আমরা যে সমস্ত বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখতে পাই তাদের সফলতার পিছনে রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা। ভাই আপনি যদি বড় ব্যবসার স্বপ্ন দেখেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষুদ্র ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করতে হবেই।
এখন আমরা জানবো ক্ষুদ্র ব্যবসাটা কি?
সাধারণভাবে বলা যায়, যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অল্প পুঁজি, ক্ষুদ্রায়তন স্থানীয় কাঁচামাল এবং অল্প সংখ্যক কর্মচারী দ্বারা গঠিত, পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত তাকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে। এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ কম বিধায় এর উৎপাদন ক্ষমতাও কম, বন্টন প্রণালী ও অল্প পরিসরে।
★ক্ষুদ্র ব্যবসার বৈশিষ্ট্য:
*অল্প পুঁজি
ক্ষুদ্র ব্যবসা একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অল্প পুঁজি অর্থাৎ বড় বড় যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের মত এর পুঁজি অত বেশি থাকে না।
*অল্প মেয়াদে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্রাকৃতির হওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের যে লক্ষ্য গুলা রয়েছে এগুলা সাধারণত ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। এজন্যই এই ব্যবসাটা সকল পরিকল্পনাই অল্প মেয়াদই হয়
*সহজেই পরিচালনা
ব্যবসাটি অন্যান্য বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে পরিচালনা করা সহজ ।কারণ এখানে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মত অত বেশি কর্মী সংখ্যা থাকে না ,বেশি হিসাব নিকাশ করতে হয় না,মালিক নিজেই এই ব্যবসার ব্যবস্থাপনা কাজে মেতে থাকেন।
*স্বাধীনভাবে ব্যবস্থাপনা
এই ব্যবসায় প্রত্যেকটা কাজ মালিক নিজে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে প্রতিটা সেক্টরি তার নিজস্ব রুচি, পছন্দ, ভাবধারা ইত্যাদির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
অল্প শ্রমিক সংখ্যা
ক্ষুদ্র ব্যবসায় শ্রমিক সংখ্যা সাধারণভাবে অল্প হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ব্যবসার শ্রমিক সংখ্যা ৫০ জনের কম হয়ে থাকে।
প্রযুক্তির অভাব
বর্তমান আমরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা দেখতে পেলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে সেটা দেখতে পাই না।
আইনগত বিষয়
ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে যে সমস্ত আইনের বিষয়বলি রয়েছে তা বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে একেবারেই কম।
বিস্তার স্বল্পতা
ক্ষুদ্র ব্যবসার আয়তন মাঝারিও বৃহৎ ব্যবসা থেকে অনেকটা ছোট, মূলধন অল্প, কর্মী সংখ্যা কম, যার ফলে এই ব্যবসার আয়তন অনেক ছোট।
স্থানীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার
এ ব্যবসায়ীদের যে কাঁচামাল গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো সাধারণত স্থানীয় দ্রব্যাদি হয়ে থাকে।
এখন আমরা জানবো ,একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ব্যবসা কি কি ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরিবর্তনে এর ক্ষেত্রে
একটি দেশের অর্থনীতিতে উত্থান পতন ঘটতেই পারে এটাই স্বাভাবিকি বটে । অর্থনৈতিক উত্থান পতনের পরিবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ও অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠানের থেকে ছোট যে ক্ষুদ্র ব্যবসা আছে এখানে পরিবর্তনটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়যে, বাংলাদেশের করোনা সংকট এর দিকে নজর দিলে এর প্রমাণ মিলে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ
যেকোনো দেশের বেকার সমস্যাকে দ্রবীভূত করার জন্য অর্থাৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার জুড়ি মেমেলা ভার। তাই এ ব্যবসার ফলে অনেকে যেমন নিজের পরিবারবর্গের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তেমনই এখানে কর্মী নিয়োগ করে অন্যদের বেকারত্ব সমস্যা দূরীভূত করে।
প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধ
যে কোন দেশ, উন্নতি করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে ওঠে স্থানীয় কাচামালের ওপর ভিত্তি করে।অর্থাৎ যে দেশের যে প্রাকৃতিক সম্পদটা বেশি পাওয়া যায় সে দেশে ওই ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রচলন বেশি হবে। যেমন রাজশাহীতে আম ব্যবসা টা বেশি।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধ
ব্যবসা দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কেননা এখানে যেমন নিজেক নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তুমি অন্যের কর্মচারীদের বেকারত্ব সমস্যা দূর করে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকল্প নেই।আমরা বর্তমানে যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান দেখছি তার প্রায় সবগুলোই একটা সময় ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
শিল্পের বিকেন্দীকরণ
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ করা অতিব জরুরি। বিকেন্দ্রিকরণে ক্ষুদ্র ব্যবসার গুরুত্ব অপরিসীম।
একচেটিয়া প্রভাব
ক্ষুদ্র ব্যবসা একচেটিয়া প্রভাব হ্রসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন বেশি হওয়ার জন্য যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা এককভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসা স্থানীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠার কারণে এই প্রভাব গুলো তারা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে।
ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র এবং নিজস্ব মালিকানধীন হয়। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে গতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন কলা কৌশলে নিয়মকানুন প্রয়োগ করা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে অনুমোদন করে। কারণ বাংলাদেশের যে গার্মেন্ট শিল্প, ইংলিশ শিল্প, চিংড়ী শিল্প এর সবকিছুই ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে দাঁড়িয়ে আছে।
★ক্ষুদ্র ব্যবসার সফলতার কারণসমূহ
*গঠনপ্রণালী সহজ
ক্ষুদ্র ব্যবসা গঠন করতে এবং পরিচালনা করার জন্য তেমন কোন আইনি সমস্যায় পড়তে হয় না। যে কেউ তার ইচ্ছে অনুযায়ী সামান্য মূলধন নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারে । এই জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এর গঠন প্রণালী তৈরি করতে পারে।
*সহজ পরিচালনা
ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে মূলধন এর পরিমান কম, কর্মচারীর সংখ্যা কম ,এ ব্যবসা গঠন প্রণালীও সহজ ।এসব কারণের জন্যই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে সহজ হয়।
*কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
স্বল্পপুজি এবং অল্প যোগ্যতা নিয়ে খুব সহজে যে কোন জায়গায় এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। ফলে শহরে, গ্রামে, শহরতলীতে বিভিন্ন জায়গায় এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে এবং যা দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
*ব্যয় স্বল্পতা
এই ব্যবসায়ের সমস্ত দায়িত্ব মালিক নিজেই থাকে ।যার ফলে ব্যয় অনেকটা কম হয়।
*তাৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ব্যবসার প্রত্যেকটা কাজ মালিক নিজেই তদারকির করে।প্রতিটা কাজেই মালিক তার নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখে। ফলে সংগঠনটিতে কোন সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।অথবা মালিক তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে।
সতর্কতা অবলম্ব
ব্যবসার সংগঠনের প্রত্যেকটা কাজে মালিক নিজেই পরিচালনা করার জন্য সংগঠনটির নীতি নৈতিকতা কৌশল সম্পর্কে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।
সহজেই পরিবর্তন
এই ধরনের ব্যবসায় অত বেশি নিয়ম-কানুন না থাকার কারণে মালিক তার ইচ্ছে অনুযায়ী ব্যবসা বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করতে পারে। যেমন সে চাইলেই ব্যবসায় বিক্রি করে অন্য ব্যবসা করতে পারে।