![]() |
| স্টক ব্যবসার আইডিয়া |
স্টক ব্যবসার আইডিয়া
স্টক ব্যবসা কি?
স্টক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে সুবিস্তার জ্ঞান অর্জন করতে হলে প্রথমে জানতে হবে স্টক ব্যবসা কি? স্টক ব্যবসা হল কোন পণ্য সিজনাল সিজনে কিনে নন সিজনালে বিক্রি করে বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করা। উদাহরণ হিসেবে আপনি কিছু পণ্য কিনে স্টোর করে রেখে সেই পণ্য দাম যখন বাড়বে তখন বিক্রি করাকে স্টক ব্যবসা করে। স্টক ব্যবসা করতে হলে আপনাকে মোটা পরিমাণের অর্থের যোগান থাকতে হবে। তবে এই ব্যবসায় যেমন লাভও বেশি তেমনি ঝুঁকি বেশি। তবে আপনি এই ব্যবসা সম্পর্কে সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারলে লাখপতি থেকে কোটিপতি হতে পারবেন।এই ব্যবসা আপনাকে প্রচুর ধৈর্য ও বুদ্ধিমান হতে হবে। এই ব্যবসা সম্পর্কে মার্কেটে প্রচুর পরিমাণ রিসার্চ করতে হবে করতে হবে।কোন ধরনের প্রোডাক্ট কিনতে হবে কোন সময় কিনতে হবে ও কোন ভাবে এই পণ্যর গুদামজাত করে রাখা যায় সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পণ্যের নিয়ন্ত্রণ ক্রয় বিক্রয়কালীন ঝুঁকির বিকল্প আপনাকে রাখতে হবে। তাহলে আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন। তাহলে চলুন বর্তমান সময় সবচেয়ে লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পাটের স্টক ব্যবসার আইডিয়া
ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আইডিটা হল পাটের স্টক ব্যবসা। পাটের ব্যবসা চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছেন। পাট জাত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পাটের পণ্যের সম্ভাবনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছেন। এ কারণেই পাটের চাহিদা আকাশচুম্বি ।এজন্যই পাটের ব্যবসার প্রসার বেড়ে চলেছে। তাই আপনি যদি পাটের সিজনে পাট কিনে স্টক করে রেখে দাম বেড়ে গেলে বিক্রি করেন তাহলে আপনি ভাল মানের একটি প্রফিট করতে পারবেন। পাট যখন বাজারে নতুন আসে তখন পাটের দাম কম থাকে। এ সময় আপনাকে পাট কিনে স্টক করে রাখতে হবে করে। তারপর আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে কখন পাটের দাম বৃদ্ধি পায়।বাজারে পাটের দাম বৃদ্ধি পেলে আপনার কাছে থাকা পাট গুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এভাবেই আপনি পাটের স্টক ব্যবসা করতে পারবেন।
পিয়াজের স্টক ব্যবসার আইডিয়া
পিয়াজ বাংলাদেশের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন পেয়াজের দাম ওঠানামা করে।প্রত্যেকদিন বাংলাদেশে হাজার হাজার টন পিঁয়াজ প্রয়োজন হয় । অনেক সময় পেঁয়াজের বাজার আকাশছোয়া দাম বৃদ্ধি পায়। পেঁয়াজ যেহেতু একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এক্ষেত্রে পিয়াজ স্টক ব্যবসার দারুন একটা সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি খুব সহজেই পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা করে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। এই ব্যবসা প্রচুর পরিমাণ নিজেকে স্বাবলম্বী করার সুযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে রমজানের সময় পেঁয়াজের প্রচুর পরিমাণ চাহিদা বাড়ে। আপনি রোজার কিছুদিন আগে পেঁয়াজ কিনে স্টক করে রাখতে পারেন। ধরেন আপনি রোজার আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা করে স্টক করে রাখলেন । সাধারণভাবে রমজানের সময় পেঁয়াজ ষাট টাকা হবে । তাহলে আপনার প্রতি কেজি পেঁয়াজে ২০ টাকা করে লাভ দাঁড়ালো ।আপনি ১০ টাকা লাভ না করে ১০ টাকা লাভ করে পাইকারদের কাছে পিঁয়াজ বিক্রি করে দিলেন। তাহলে আপনার প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ টাকা করে লাভ হল। আপনার যদি ১০০০ কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করা থাকে তাহলে আপনার লাভ দাঁড়ালো ১০×১০০০=১০০০০ টাকা ।ধরলাম আপনার খরচ হয়েছে ২০০০ টাকা। তাহলে আপনার লাভ দাঁড়ালো ৮০০০ টাকা। তাহলে বুঝতে পারলেন অল্প সময়ে কিভাবে পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা করে অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা যায় । এভাবে আপনি পিঁয়াজের স্টক ব্যবসা করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ধানের স্টক ব্যবসার আইডিয়া।
আমরা যেহেতু মাছে ভাতে বাঙালি সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রচুর পরিমাণ চালের প্রয়োজন হয়। আর এটা যেহেতু ধান থেকে আসে সে ক্ষেত্রে ধানের গুরুত্ব ও সমান। এক্ষেত্রে ধানের চাহিদা প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। এজন্য ধানের ব্যবসার চাহিদা অনেক ।ধানের যখন সিজন থাকে তখন ধান উঠানোর জন্য কি কৃষকদের অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। তখন ধানের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃষকের অসহায় সুযোগ নিয়ে কৃষকদের একটা বিপদে ফেলে দেয় কম দামে ধান ক্রয় করার জন্য ।তখন ধানের দাম অনেকটা কমে যায় ।সে মুহূর্তে আপনি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয় করে স্টক করে রাখতে পারেন। ধানের দাম যখন বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি এই ধানগুলো বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।এতে আপনি ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন এবং কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাবে। এভাবে আপনি ধানের স্টক ব্যবসা করতে পারবেন।
আলু স্টক ব্যবসার আইডিয়া
আলু স্টক ব্যবসা আইডিয়া আপনাকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ আলু এমন একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যা মানুষের প্রত্যেক দিনের খাবার তালিকায় থাকে।বাঙালির খাদ্য তালিকায় আলু অন্য কিছু চিন্তাই করতে পারে না।এজন্য প্রত্যেকদিন আলুর বাজারদর ওঠানামা করে। আপনি সত্যি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান আলুর স্টক ব্যবসা আপনার জীবনে একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আসতে পারে। এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না জাস্ট আলুর সিজনে আলু ক্রয় করবেন কোলেস্টেরলে রাখবেন। যখন দাম দাম বাড়বে তখন বিক্রি করে দিবেন ।এভাবেই আপনি আলুর স্টক ব্যবসা করতে পারবেন।
গমের স্টক ব্যবসার আইডিয়া
গমের স্টক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে এখন আলোচনা করব। বাংলাদেশের খাদ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গম। গমের চাহিদা বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্য উৎপাদনে গমের ভূমিকা অপরিসীম। তাই গম নিয়ে ব্যবসা করলে খুব দ্রুত সাফল্য লাভ করা যাবে। গমের স্টক ব্যবসা করতে হলে গমের সিজনে গম ক্রয় করে স্টোর করে রাখতে হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে কখন গমের দাম বৃদ্ধি পায়। যখন গমের দাম বৃদ্ধি পাবে আপনি বাজার রিসার্চ করে দেখবেন যে আপনার গম বিক্রি করলে এখন মুনাফা লাভ হবে তখনই গম বিক্রি করে দিবেন। এভাবে খুব সহজে আপনি গমের স্টক ব্যবসা করতে পারেন।
ইটের স্টক ব্যবসা আইডিয়া
ইটের স্টক ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে এখন আলোচনা করব।এই ব্যবসা করতে হলে আপনাকে মোটা অংকের বিনিয়োগ করতে হবে ।তাহলে আপনিই খুব সহজেই ব্যবসা এ ব্যবসা করতে পারবেন ।আপনি বিগত বছরগুলো লক্ষ্য করলে দেখব যে ইটের দাম প্রতি বছরের বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি আরো জেনে থাকবেন যে বর্ষার মৌসুমে ইটের কলকারখানা বন্ধ থাকে। এই সিজনে ইটের দাম প্রচুর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকেন।আবার শীতকালে ইটের দাম স্বাভাবিক হয়ে যায়। এজন্য আপনাকে শীতকালে যখন ইটের দাম স্বাভাবিক থাকে তখন আপনাকে ইট কিনে রাখতে হবে।বর্ষাকালের যখন ইটের দাম বৃদ্ধি পাবে তখন আপনার স্টক করা ইট গুলো বিক্রি করে মোটা অংকে প্রফিট করতে পারবেন। আপনি যত বেশি টাকা ইনভেস্ট করবেন আপনার প্রফিটের পরিমাণ তত বেশি হবে। এ স্টক ব্যবসা করে আপনি কোটিপতি হয়ে যেতে পারেন। এভাবেই আপনি ইটের স্টক ব্যবসা করতে পারবেন।
সিগারেটের স্টক ব্যবসা।
আমরা জানি যে প্রতি বছর বাজেটের সময় বিভিন্ন দ্রব্যর দাম বৃদ্ধি পায়।সিগারেট স্টক ব্যবসা করতে হলে বাজেটের আগে আপনাকে সিগারেট কিনে রাখতে হবে।যখনই সিগারেটের দাম বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি বিক্রি করে দিবেন।
সুপারির স্টক ব্যবসা।
আমরা জানি যে সুপারি প্রচুর পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। যখন সুপারির সিজন তখন সুপারির দাম অনেকটা কমে যায়।আবার একসময় সুপারির দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আপনি সুপারি স্টক করে রেখে যখন সুপারির দাম বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি বিক্রি করে দিবেন।
সরিষা স্টক ব্যবসা
আমাদের প্রচুর পরিমাণ ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। তেলের দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করেন। তেলের দামের সাথে সরিষারও একটি মিল রয়েছে।যখন তেলের দাম বৃদ্ধি পায় তখন সরিষার দাম বৃদ্ধি পায়। তাই আপনি যদি সরিষা স্টক করে রাখেন তাহলে আপনি দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে সরিষা বিক্রি করতে পারবেন। আরো আপনি আরো অনেক ধরনের পণ্য স্টক করে রাখতে পারেন যেমন ভুট্টা বাদাম তেজপাতা মসলা জাতীয় পণ্য খেজুর ডাল কাপড় ইত্যাদি ।
স্টক ব্যবসায়ীদের সফল হওয়ার উপায় ।
স্টক ব্যবসা আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে মার্কেট সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এছাড়াও আপনাকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে এবং ধৈর্য থাকতে হবে। কারণ স্টক ব্যবসায় আস্তে আস্তে মুনাফা হয় ।আপনি যদি খুব দ্রুত কোটিপতি হতে চান তাহলে আপনার জন্য স্টক ব্যবসা নয়। এই ব্যবসায় তাড়াহুড়ো করতে গেলে আপনি লস খাবেন। তাই আপনার যদি ধৈর্য থাকে তাহলে আপনি ব্যবসায় নামতে পারেন। তাছাড়া এই ব্যবসা করা আপনার জন্য উচিত হবে না। যত ধৈর্যশীল এবং দূরদর্শী ব্যক্তি হবেন আপনিই ব্যবসায় তত বেশি সাফল্য লাভ করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই যে আপনি যে ব্যবসা করেন না কেন? আপনার সেই ব্যবসা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা লাগবে।তার সাথে লাগবেকঠোর অধ্যবসায় ও সততা। আপনি যদি সততার সাথে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ মূলধন থাকে তাহলে আপনি চাকরি পিছনে সময় নষ্ট না করে ব্যবসা করে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
