ব্যবসায় উদ্যোগ কি

ব্যবসায় উদ্যোগ


ব্যবসায় উদ্যোগ

ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণা 
(Concept of Entrepreneurship)

Entrepreneurship is like giving birth to a child.. The women's love of child overcomes the risk of life. The entrepreneur's passion overcomes the risk of loss.

ইংরেজি শব্দ Entrepreneurship-এর বাংলা পরিভাষা হচ্ছে উদ্যোগ বা ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ। ফরাসি শব্দ Entreprender থেকে উদ্ভব হয়েছে Entrepreneur শব্দটি । এর অর্থ হলো 'To undertake' অর্থাৎ কোনো কিছু করার দায়িত্ব নেওয়া। তাই বলা যায়, দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু শুরু করাই হলো উদ্যোগ। আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলে তাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলা হয়।

উদ্যোগ বলতে বোঝায়  স্বাধীনভাবে কোনো কিছু শুরু করার যে চেষ্টা।

ব্যবসা বাণিজ্যেরয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে মুনাফার লাভের  আশায় নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া। ব্যাপক অর্থে ব্যবসায় উদ্যোগ, -  মুনাফার লাভের  জন্য  ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণগুলো একসাথে  করে নতুনভাবে  কোনো একটি  ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি বা পুরাতন  কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির পথে  নিয়ে যাওয়ার জন্য  কর্মপ্রচেষ্টাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলা হয়।

যেমন: হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা,বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা , পুকুর লিজ  নিয়ে মাছ চাষ, জমি ভাড়া  নিয়ে বাগান তৈরি তেরি , আচার তৈরি করে বিক্রি প্রভৃতি।

আমেরিকান  ফোর্ড নামক  কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড, জাপানের ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি কারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটসুসিটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কনোকে ম্যাটসুসিটা ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত  ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ । বাংলাদেশের সফল ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ  হলেন জহুরুল ইসলাম, রণদা প্রসাদ সাহা, জুনাব আলী, স্যামসন এইচ চৌধুরী, . হোসনে আরা বেগম ইত্যাদি  ব্যক্তিগ্ণ।

  •   . . আর. খান (Dr. A. R. Khan) এর মতে, 'Entrepreneurship is considered as the act of assuming the risk and the tasks of an entrepreneur.' অর্থাৎ 'ঝুঁকি গ্রহণ এবং শিল্পোদ্যোক্তার কার্যাবলিই শিল্পোদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।'

 উপরিউক্ত আলোচনা সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে ব্যবসায় উদ্যোগ এর ধারণা পাওয়া যায়-

  • ·       ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের    উদ্যোক্তা একজন  সৃজনশীল, সাহসী , কর্মক্ষম ও  কৌশলী ব্যক্তি  হন।
  • ·       ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ করে ঠিকভাবে কাজে লাগান;
  • ·        ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা মধ্যম পন্থায় ঝুঁকি নেন;
  • ·        ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা নতুন নতুন পণ্য, নতুন ধরনের ধারণা উদ্ভাবন করেন;
  • ·        ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা পণ্যের বিভিন্ন প্রকারের  বাজার খুঁজে বের করেন;
  • ·        ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা পণ্য উৎপাদনের  কৌশলের নতুনতব  প্রবর্তন করেন;
  •       ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের  উদ্যোক্তা একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা নিয়ন্ত্রণের দায়-দায়িত্ব নেন।


ব্যবসায় উদ্যোগ ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধাসমূহের পূর্বানুমানের সাথে জড়িত। নতুন পণ্য, সেবা বা ধারণার উদ্ভাবন, উৎপাদনের নতুন কৌশল প্রবর্তন, বাজারের প্রচলন, কাঁচামালের নতুন উৎসের সন্ধান এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রভৃতি ব্যবসায় উদ্যোগের কাজ।

অতএব, ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণসমূহকে একসাথে  করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে উন্নতি সাধনের  দিকে নিয়ে যাওয়ার কর্মচেষ্টাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলে।

ব্যবসায় উদ্যোগের ক্রমবিকাশ  
(Evolution of Entrepreneurship)

ফরাসি 'Entreprender' শব্দ থেকে ইংরেজি 'Entrepreneur' (ব্যবসায় উদ্যোগ) শব্দ এসেছে বলে জানা যায় । ''Entrepreneur(ব্যবসায় উদ্যোগ)  শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো 'To undertake' বা কোনো কিছুর দায়িত্ব নেওয়া। Oxford English Dictionary (১৮৯৭)-তে শব্দটি দিয়ে সংগীত বা বিনোদন প্রতিষ্ঠানের সংগঠককে বোঝানো হতো। অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে ইংরেজি ''Entrepreneur' (ব্যবসায় উদ্যোগ)  শব্দটি সংগঠক, আয়োজনকারী (Undertaker) অর্থেই ব্যবহৃত হতো। 'Entrepreneur (ব্যবসায় উদ্যোগ)   উদ্যোক্তার ঐতিহাসিক পটভূমি ক্রমবিকাশের ইতিহাস নিচে আলোচনা করা হলো-

 প্রাচীন যুগ (Ancient age): 

মানুষ একত্রিত হওয়ার পর নিজেদের প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে  কূষিকাজ , পশুলালন-পালন, পশুশিকার, মৎস্য  শিকারের মতো বিভিন্ন প্রকারের জীবিকা বেছে নেয়।এবং এতে করে  নিজেদের উৎপাদিন কূত  বাড়তি খাদ্য বা শস্য অন্যের সাথে বিনিময় করে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা চালায়। সময়ের ধারাবাহিকতয়  কামার, কুমার, তাঁতিএবং আরো  অন্যান্য  সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এসব রকমের  কাজ ছিল মানুষের কাছে একপ্রকারের  নতুন চিন্তাভাবনা   উদ্যোগের একেকটি ফল। ডেনিস নাবিক মার্কো পোলো (Marco Polo) ছিলেন প্রাচীন যুগ এর ''Entrepreneur' (ব্যবসায় উদ্যোগ) । ১৩০০ সালের দিকে তিনি দূরপাল্লার  বাণিজ্য পথ প্রতিষ্ঠার জন্য  চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মার্কো পোলো তার নিজের পণ্য বা শস্য বিক্রয়ের জন্য ধনী সমাজের কাছ থেকে উচ্চহারের  সুদে ঋণ নিয়েছিলেন। পুঁজিবাদিরা  হচ্ছে একপ্রকারের  নিষ্ক্রিয় ঝুঁকি বহনকারী। আর সেই সাথে সাহসী বণিক সম্প্রদায়েরা  শারীরিক মানসিকভাবে  সব ঝুঁকি নিয়ে বাণিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন যুগের  এ প্রকারের  ঝুঁকি, উচ্চহারের  সুদে ঋণ নেওয়া, বাজার তৈরি প্রভৃতি কাজ আধুনিক ব্যবসায় উদ্যোগের  সাথে অনেকটা এক আত্না প্রকাশ করে । ১৪৯২ সালের দিকে  ইতালীয় নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস (Christopher Colombus) এর বিভিন্ন দেশে  জয়, নতুন সমুদ্রপথের সন্ধান, নাবিকদের বোঝানো, পরিকল্পনা তৈরি প্রভৃতি ব্যবসায় উদ্যোগের  ধারণাকে আরও উন্নতসাধন করতা সাহায্য করেছে 

মধ্য যুগ (Middle age): 

মধ্য যুগে ব্যবসায় উদ্যোগ উদ্যোগ স্বাভাবিক বিকাশ হতে থাকে। সময় ইতালিতে শিল্প ও ব্যবসায় -বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার লাভ  হয়। এছাড়া বৈদেশিক ব্যবসায় বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে বন্দরকে কেন্দ্রিক করে  ব্যবসায়ের প্রচলন শুরু  হয়। ব্যাংক ব্যবস্থা হিসাব পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতি সাধন  হয়। ধীরে ধীরে বৈদেশিক ব্যবসায়  বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মধ্য যুগের এ সময় এসে  ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়টি সম্পর্কে লোকজন পরিচিত হয়ে ওঠে। ষোড়শ শতকের শুরুতে Entrepreneur(ব্যবসায় উদ্যোগ ) শব্দটি নির্মাণ কৌশল (Civil Engineering)-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। এই ধরনের বড় পরিসরের  প্রকল্পগুলোতে  ব্যক্তি কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতেন আগ্রহী হতেন  না। পুঁজিবাদি বা সরকার প্রকল্পগুলোতে ব্যবস্থাপনায় সম্পদ সরবরাহ করে ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হতেন । মধ্য যুগে গতানুগতিক Entrepreneur(ব্যবসায় উদ্যোগ প্রতিনিধিত্ব তত্ত্ববধানমূলক দায়িত্ব পালন করতেন।  এর মধ্যে ছিল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি   দুর্গ নির্মাণ, জনসাধারণের ঘড়- বাড়ি তৈরি, মঠ বা গির্জা নির্মাণ প্রভৃতি।

আধুনিক যুগ (Modern age): 

আধুনিক যুগ বলতে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের (১৭৫০-১৮৫০) সমসাময়িক কালকে বোঝায়। সময় বাজারে পণ্যের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না বাড়ায় নতুন নতুন ব্যবসায় গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে ব্যবসায় উদ্যোগ বা নতুন ব্যবসায় গড়ার ভাবনা সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরিপ্রেক্ষিতেই 'ব্যবসায় উদ্যোগ' বা 'শিল্পোদ্যোগ' ধারণা আলোচনায় আসে। আধুনিক যুগে'ব্যবসায় উদ্যোগ' ধারণার উৎপত্তি ক্রমবিকাশ নিচে তুলে ধরা হলো-

অষ্টাদশ শতাব্দী (Eighteenth century):

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্যবসায় উদ্যোগ('Entrepreneur)  ধারণাটি আরও  বিস্তর ভাবে সংস্কূত   বিকশিত  হতে থাকে। শতাব্দীর  বিখ্যাত  উদ্যোক্তারা হলেন থমাস নিউকমেন,  জেমস ওয়াট, , জোন হোপকিনস  প্রমুখ। শতাব্দীর  বিখ্যাত  ব্যক্তিবর্গের এক্ষেত্রে অবদান হলো-

১৭১৬ সালে ফরাসি নাগরিক জনল (John Law)  কে তৎকালীন সরকার রয়েল ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেয়। এর মাধ্যমে তিনি উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করেন।

১৭৩০ সালে রিচার্ড ক্যানটিলন (Richard Cantillon) সর্বপ্রথম 'Entrepreneuশব্দটি ব্যবসায় উদ্যোগ বোঝাতে ব্যবহার করেন। এজন্য তাকে ব্যবসায় উদ্যোগের জনক বলা হয়। তিনি উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি সরবরাহকারী (Risk taker) হিসেবে উল্লেখ করেন।

ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য
 (Characteristics of Entrepreneurship)

 ব্যবসায় বা ব্যবসায়িক ধারণাকে  পরিবর্তনের  পিছনে ব্যবসায় উদ্যোগের  ভূমিকা অনেক । রিচার্ড ক্যানটিলন  ঝুঁকি অনিশ্চয়তার ভিতর  দিয়ে উৎপাদনের উপকরণগুলোএকসাথে  করেন। এরপর নিজ কর্মচেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়কে সাফল্যের মন্ডিতর  দিকে নিয়ে যান। মূলত উদ্যোক্তাদের  এই রকমের নিরলস কর্মচেষ্টাকেই ব্যবসায় উদ্যোগ বলা হয়। ব্যবসায় উদ্যোগের বহুমুখী ধারণা প্রচলিত। তাই ব্যবসায় উদ্যোগকে সঠিকভাবে জানতে ও  বুঝতে হলে এর বিভিন্ন নীতিমালা   উপাদান সম্পর্কে  ভালভাবে জানতে হবে। নিচে ব্যবসায় উদ্যোগের বেশ  কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।যথাঃ

 মুনাফা অর্জনের সাথে সম্পৃক্ত, (Related with earning profit): ব্যবসায় উদ্যোগকে অবশ্যই মুনাফা আয়ের  সাথে  সম্পৃক্ত হতে হবে। এর ভিতর দিয়ে   উদ্যোক্তার  নিজের কর্মসংস্থান সাথে সাথে মুনাফা আয়ের  সম্ভাবনা থাকে। উদ্যোক্তা তার নিজের কর্মসংস্থান  উন্নতি সাধন করার ফলে বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

ঝুঁকি গ্রহণ (Taking risk): আর্থিক দিক দিয়ে  লোকসানের   শঙ্কাকে ঝুঁকি বলে। উদ্যোক্তা মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার  ঝুঁকিও নিয়ে থাকেন । উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, উন্নতি সাধন, অর্থকর্মসংস্থান  প্রভৃতি বিষয়ে উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি ( risk) নিতে হয়। কথায় আছে 'No risk, no gain; High risk, high gain.' অর্থাৎ, ঝুঁকি নেই তো উন্নতিও  নেই; আর ঝুঁকি বেশি তো উন্নতি ও বেশি। তবে ঝুঁকি তাকে মধ্যম মাত্রায় নিতে হয়।

 সৃজনশীল উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ড (Creative and innovative activity):

যে কোনো বিষয়ের ওপর নতুন কোনো ধারণা সূষ্টি  করাই হলো  সৃজনশীলতা। উদ্যোক্তারা সাধারনত  সৃজনশীল চারত্রের বিশেষ ক্ষমতার   অধিকারী হয়ে থাকেন। সৃজনশীল মানসিকতার মাধ্য দিয়ে তিনি উদ্ভাবনী শক্তিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান । তিনি পুরাতন  পণ্য ও উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তে  উন্নত পণ্য ও উৎপাদন পদ্ধতির ক্ষেত্রে  উন্নত পদ্ধতি প্রবর্তন চালু  করেন। তিনি কাঁচামালের নতুন উৎস আবিষ্কার করেন পণ্যের বাজারের  বিস্তূতি ঘটান   এই সৃজনশীলতা বা উদ্যোগ গ্রহণ উদ্যোক্তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ।

উৎপাদনের উপকরণসমূহ সংগ্রহ (Collecting factors of production): 

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণসমূহ তথা ভূমি, শ্রম, মূলধন সংগঠনকে একত্র করতে হয়। নতুন ব্যবসায় স্থাপন পরিচালনার জন্য স্থান, শ্রমিক অর্থের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বিভাগের সাথে এসব উপাদানের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠিত করতে হয়। এরপর তা সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করতে হয়।

  শূন্যতা পূর্ণ হওয়া  জনিত কাজ (Gap filling function):

  ব্যবসায় উদ্যোগের একটি  গুরুত্বপূর্ণ  বিশেষত্ব হলো  শূন্যতা পূরণ করা । এজন্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে  বর্তমানে  প্রচলিত   জ্ঞানের  সাথে সাথে  অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে  বা দেশে  প্রচলিত যে  জ্ঞানের  ক্ষেত্রে  পার্থক্য রয়েছে  সেটা  নির্ণয় করে তা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়।

 অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা অনুসন্ধান (Searching economic opportunities): 

উদ্যোক্তারা সাধারনত  অর্থনৈতিক বিষয়ে  সুযোগ-সুবিধা  খোজ  করে থাকেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের  উৎস থেকে অর্থনৈতিক তথ্যবলি  একত্রিত  করেন। অর্থনৈতিক সুযোগ -সুবিধা গুলো যে উদ্যোক্তা যত বেশি আকারে  আনুসন্ধান এবং তার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন, সে উদ্যোক্তার ব্যবসায়  উদ্যোগ তত বেশি উন্নতি সাধন হয়।

কৃতিত্ব অর্জন চাহিদা (Need for achievement):

ব্যক্তির  কার্য  নিষ্পন্ননের  যথাযথ স্বীকারোক্তি সামর্থ পাওয়ার  ভিতর  দিয়ে নতুন কিছু করার চাহিদাকে  কৃতিত্বার্জন চাহিদা বলে। ব্যবসায় উদ্যোগ-এ উন্নতি সাধন  করতে পারলে বিশেষভাবে  সম্মাননা  অর্জন করা যায়।  সামাজিক ক্ষেত্রে এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও একজন সফল উদ্যোক্তাকে কৃতিত্বার্জন চাহিদা ব্যক্তির কাজ সম্পাদনের যথাযথ স্বীকৃতি কৃতিত্ব পাওয়ার মাধ্যমে নতুন কিছু করার আকাল সম্মাননা জানানো হয়। এর দ্বারা ব্যবসায় উদ্যোগে কাজের প্রতি ঝোক বেড়ে যায়। তাই ব্যবসায় উদ্যোগের ভিতর দিয়ে  ব্যক্তি  তার  কৃতিত্বার্জনের  উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে  পারে।

  উচ্চাকাঙ্ক্ষাসমৃদ্ধ কাজ (Ambitious work): 

উদ্যোক্তা এমন ব্যক্তিত্ব  যার ফলে ব্যক্তির মধ্যে  স্বাধীন চিন্তাশক্তি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে। স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা  করার সামর্থকে  উদ্যোক্তা ব্যক্তিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেয়। উদ্যোক্তা তার তীব্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা , বুদ্ধিমত্তা, পরিশ্রম, কর্মকৌশল,  ব্যক্তিত্ব প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে  উচ্চাকাঙ্ক্ষিত  লক্ষ্যের দিকে  পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

পরিকল্পনা প্রণয়ন (Formulating plan): 

উদ্যোক্তাকে একজন মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তার উদ্যোগের জন্য পরিকল্পনা তৈরি, নির্দেশনা দান নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন। এছাড়া পরিকল্পনার জন্য অনুমিত ব্যয় নির্ধারণ করেন। তাই বলা যায়, সঠিক কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি ব্যবসায় উদ্যোগের অংশ।

 সংগঠিতকরণ. (Organizing): 

ব্যবসায়  উদ্যোক্তাকে শুধু ব্যবসায়  উদ্যোগ নিলেই হয় না, তাকে বিভিন্ন সেক্টর -উপসেক্টর  কর্মীচারীদের  মধ্যে  সু-সম্পর্ক  নির্ধারণ করতে হয়। অতঃপর  তার ব্যবসায়  উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হয়। সংগঠন তৈরির সামর্থ  ব্যবসায়  উদ্যোক্তা এর  উন্নতি সাধনের  জন্য প্রয়োজন হয়। তাই সংগঠিতকরণ  ব্যবসায়  উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 ব্যবস্থাপনা দক্ষতা নেতৃত্ব (Managerial skill and leadership): 

ব্যবসায়  উদ্যোগে সফলতা অর্জন করতে চাইলে  উদ্যোক্তার অবস্যই  ব্যবস্থাপকীয় সামর্থ  এবং  নেতৃত্বের প্রদান করার দক্ষতা  থাকতে হবে। এই দক্ষতা দুটি ব্যবসায় উদ্যোক্তা হিসেবে উন্নতি  অর্জনের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ  উপাদান। এজন্য উদ্যোক্তাকে মুনাফা  অর্জন  এবং সম্পদ বূদ্ধি  করতে হলে ব্যবস্থাপনা  এবং নেতৃত্ব প্রদানে দক্ষতা সম্পন্ন হতে হবে।

 সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা (Decision making): 

ব্যবসায়  উদ্যোক্তা তার যুক্তিমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যবসায় উদ্যোগ নেন এবংএই বিষয়বলীর  সঠিক পরিচালনা  সফলতা অর্জনের  ব্যবস্থা করেন। ব্যবসায় উদ্যোক্তার  সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য সম্পদের সমন্বয়সাধন হয়। উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় উদ্যোগের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী  হিসেবে বিবেচনা  করা হয়। তিনি তার উপলব্ধির ক্ষমতা, ব্যক্তিত্ব অনুপ্রেরণার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়  উদ্যোগের ব্যাপারে সামগ্রিকভাবে যুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেন


ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলি
Functions of Entrepreneurship

যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক  ব্যবসায়  উন্নয়নে উদ্যোগই মুখ্য ভূমিকা পালন করে   ব্যবসায়  উদ্যোক্তা যে কোন পর্যায়ে  কাজ করতে পারবেন তা নির্ভর করে সে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান    রাজনৈতিক অবস্থার  ওপর। উন্নত দেশেগুলওতে  যেসব সুযোগ-সুবিধা সমূহ  বিরাজমান থকে , উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে  সেসব সুযোগ-সুবিধা সমূহ  নেই। তাই এসব দিকবিবেচনা সাপেক্ষে  ব্যবসায় উদ্যোগ কার্যাবলির বিয়ষসমূহে  ভিন্নতা দেখা যায় নিচে ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

ব্যবসায় উদ্যোগ  চিত্তার উন্নয়ন (Development of entrepreneurial thinking):

একজন সফল  ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে প্রথমেই  সৃজনশীলতার সাথে ব্যবসায়  উদ্যোগ চিন্তা ভাবনার উন্নয়ন করতে হয়। ব্যবসায় উদ্যোক্তা নিজস্ব দক্ষতা    উপকরণের সহযাত  বিষয়টি  চিন্তাভাবনা  করে বাজারের সুযোগ- সুবিধা বা অভাববোধ  খুঁজে বের করেন। এরপর সে অনুযায়ী তার নিজ ব্যবসায় উদ্যোগে  চিন্তা-ভাবনার  উন্নতি  ঘটান। এক্ষেত্রে তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।

 উদ্ভাবন (Innovation):

যথাযত পণ্য, ধারণা বা প্রযুক্তি আবিষ্কার, যুক্তিমূলক  নির্বাচন সঠিকভাবে ব্যবহারের ওপর ব্যবসায়  প্রতিষ্ঠানের উন্নতি  নির্ভর করে। মূলত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে  প্রয়সই  উন্নত প্রযুক্তির যথাযত আবিষ্কার ও সঠিক ব্যবহার হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বের কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে তা নিজ দেশ প্রতিষ্ঠানের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিল রেখে উপযুক্ত করে নিতে হয়। অন্যথায় দেশের উপযোগী কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হয়। কাজটি ব্যবসায়  উদ্যোক্তারা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, ক্ষমতা উদ্দীপনা  নিয়ে  সঠিকভাবে  করে থাকেন।

 সংগঠন   নেতৃত্ব  প্রদান (Organizing and leading): 

ব্যবসায়  উদ্যোক্তার  প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নেতৃত্ব প্রদান সাংগঠনিক কাজ সম্পাদন। সুনির্দিষ্ট কাজের ধারণা নিয়ে উপকরণ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্যোক্তার উদ্যোগ কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানের ধরন নির্বাচন, প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ স্থাপন, আনুষ্ঠানিকতা' পালন প্রভৃতি প্রাথমিক কাজগুলোই উদ্যোগের সাংগঠনিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।

ঝুঁকি গ্রহণ (Taking risk): 

ব্যবসায়  উদ্যোক্তাকে সব সময় ঝুঁকি অনিশ্চয়তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ব্যবসায়  উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের সব দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হয়। উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সফল হবে না।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision making): 

যেকোনো বিষয়েই  সিদ্ধান্ত  গ্রহণ  একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য আর্থ- সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থান, সংগৃহীতম  অর্থ সম্পদের পরিমাণ, মূলধন বা পুজি  কাঠামো, তথ্য প্রযুক্তির সহজতা  প্রভৃতি বিশ্লেষণ করতে হয়। উদ্যোক্তা যেকোনো প্রকল্পের সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

সামাজিক দায়িত্ব পালন (Performing social responsibilities): 

শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজের প্রতি উদ্যোক্তার দায়িত্ব আছে। উদ্যোক্তা শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে সমাজের বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এছাড়া উদ্যোক্তাগণ নতুন নতুন ধারণা তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। আবার রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল নির্মাণ, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো প্রভৃতির মতো সমাজকল্যাণমূলক কাজও করতে পারেন।

দক্ষ ব্যবস্থাপনা (Efficient management): 

ব্যবস্থাপনা এমন একটি বিষয় যার সুষ্ঠু প্রয়োগ ছাড়া সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তাগণ উদ্যোগ নেওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থাপনার কাজও করেন। এজন্য তাদের দক্ষ ব্যবস্থাপকও হতে হয়। তাই বলা হয়, 'সব উদ্যোক্তাই ব্যবস্থাপক, তবে সব ব্যবস্থাপকই উদ্যোক্তা নন।'

 নতুনত্ব সৃষ্টি (Creating novelties): 

বর্তমান প্রতিযোগিতাশীল ব্যবসায় জগতে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের রুচি ভোগের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তনশীলতার সাথে খাপ খাইয়ে চলার জন্য প্রতিনিয়তই ব্যবসায়ের ধরন শিল্পের উৎপাদনে পরিবর্তন আনতে হয়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাগণ পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে সর্বদাই নতুনত্ব আনেন। এভাবে তিনি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেন।

 উপযুক্ত প্রযুক্তি নির্ধারণ (Selecting proper technology):

  উদ্যোক্তাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিজ দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিল রেখে ব্যবহার করতে হয়; অথবা দেশের উপযোগী কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করে নিতে হয়। কাজটি উদ্যোক্তাগণ তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, দক্ষতা উদ্যম দিয়ে সুষ্ঠুভাবে করে থাকেন।

 অর্থসংস্থান (Financing): 

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ এর সঠিক ব্যবহার সংক্রান্ত কাজকে অর্থসংস্থান বলে। অর্থকে ব্যবসায়ের জীবনীশক্তি বলা হয়। নতুন ব্যবসায় বা নতুন ধারায় ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থসংস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে সংগ্রহ করা যাবে, তা নির্ধারণ করতে হয়। এর পাশাপাশি তাকে উক্ত অর্থের সঠিক ব্যবহারেও সচেষ্ট থাকতে হয়।

 বাজার সৃষ্টি (Creating market): 

পণ্য বা সেবার বর্তমান সম্ভাব্য ক্রেতা সমষ্টিকে বাজার বলা হয়। তাই উদ্যোক্তার উদ্ভাবিত পণ্য সেবার জন্য নতুন ক্রেতারও সন্ধান করতে হয়। এজন্য বিভিন্ন কৌশলে সম্ভাব্য ক্রেতা ভোক্তাদের চাহিদা বাড়াতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। অন্যথায়, তার আবিষ্কার উদ্ভাবন অনর্থক হয়ে পড়ে। এছাড়া তাকে বিদ্যমান পণ্যের নতুন বাজার তৈরিতে সচেষ্ট থাকতে হয়।

 গবেষণা উন্নয়ন (Research and development):

  উদ্যোক্তার অন্যতম প্রধান কাজ হলো নতুন নতুন পণ্য সেবা উৎপাদন, উৎপাদনের নতুন উপায় উদ্ভাবন এবং তা প্রবর্তন করা। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বেশি লাভ করতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হয় এবং দ্রব্যের গুণ বাড়াতে হয়। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুনত্ব প্রবর্তন করা।

 তাই বলা যায়, শিল্প বা বাণিজ্যের অগ্রগতি না হলে সভ্যতা এত দূর অগ্রসর হতো না। কোনো দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিল্প বাণিজ্য। আর শিল্প বাণিজ্যের উন্নয়নে উদ্যোক্তাই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে বর্তমানে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে উদ্যোক্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এজন্য উদ্যোক্তাকে উপরিউক্ত কাজ সম্পাদনে সচেষ্ট থাকতে হয়।


সফল উদ্যোক্তার গুণাবলি
Qualities of Successful Entrepreneur

অনেকে মনে করেন, “উদ্যোক্তাগণ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা”। কিন্তু কথাটি একদম পুরাপুরি সঠিক কথা নয়। বর্তমানে  বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগ হওয়া এ যুগে  যথাযত  শিক্ষাণ , প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য  সুযোগ-সুবিধা প্রদানের  মাধ্যমে ব্যবসায়  উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়।ব্যবসায়  উদ্যোক্তাকে উদ্ভাবক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে নিম্নোক্ত যেসব  গুণাবলীর অধিকারী হতে হয় সেগুলো হলোঃ 

 কৃতিত্ব অর্জনের উচ্চা আকাঙ্ক্ষা (High need for achivement):

ব্যক্তির  কার্য  নিষ্পন্ননের  যথাযথ স্বীকারোক্তি ও সামর্থ পাওয়ার  ভিতর  দিয়ে নতুন কিছু করার চাহিদাকে  কৃতিত্বার্জন চাহিদা বলে।  ভবিষ্যৎতের উন্নতি   কৃতিত্ব অর্জনের উচ্চা আকাঙ্ক্ষায় উদ্যোক্তা নিজের কাজের প্রতি  অগ্রহী  হয়ে ওঠেন। কৃতিত্ব অর্জনের  বিষয়টিকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা  চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করেন । যে কোনো কাজ চ্যালেঞ্জিং ভাবে  করতে তিনি বিশেষভাবে  আনন্দ পান। কাজে সাফল্যের প্রতি উচ্চা আকাঙ্ক্ষা থাকায় ব্যবসায় উদ্যোক্তা  যেকোনো ধরনের ঝুঁকি গ্রহন ও  নিজের কাজের প্রতি  আন্তরিক  হয়ে ওঠেন।

সাহসী ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা (Brevity and mentality of taking risk):

ব্যবসায়  উদ্যোক্তারা  প্রকৃতিগতভাবেই  সাহসী হয়ে থাকেন। ভবিষ্যৎতে কি হবে সেসব বিষইয়ে,  অনিশ্চিত জেনেও ব্যবসায়  উদ্যোক্তারা  যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়  উদ্যোগ  নিতে কখনোই পিছপা হন না। ব্যবসায়  উদ্যোক্তারা  চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে  অগ্রসর  হয়ে যান। নিজের কর্মক্ষমতায় চ্যালেঞ্জকে  জয়  করেন। তবে অবশ্যই এ ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় হতে হবে।

 দূরদর্শিতা/দূরদৃষ্টি (Foresightness):

ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাছে  বা প্রয়োজন হবে তা আগেই থেকেই দূরদৃষ্টির মাধ্যমে  অনুমান করার সামর্থ্যকে ব্যবসায়  উদ্যোক্তার  দূরদর্শিতা বা  দূরদৃষ্টি বলে। ব্যবসায়  উদ্যোক্তার ভবিষ্যৎ অনুমানের দক্ষাতা   ভবিষ্যত আগে থেকেই অনুমান করার দক্ষাতা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন ও ফলপ্রসু  হয়। তিনি তার দূরদর্শিতা মধ্য  দিয়ে অব্যবহৃত সুযোগ-সুবিধা খুঁজে বের করে তা কাজে লাগান।

সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী শক্তি (Creativity and innovating ability):

সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী শক্তি সফল ব্যবসায় উদ্যোক্তার অর্জনে সাহায্য করে। সফল উদ্যোক্তার  প্রধান গুণ হলো সৃজনশীলতা। মেধা ও বুদ্ধিমত্তার  সাহায্যে নতুন ধারণা, নিয়মনীতি , পদ্ধতি প্রভৃতি নতুন ধারণা, নিয়ম বা পদ্ধতি তৈরির দক্ষাতাকে সৃজনশীলতা বলে।' সীমিত মাত্রা  অর্থ ও  সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে নতুন পণ্য  তৈরির সামর্থ্য ধারণা উদ্ভাবনে একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে মেধা সতর্কতার স্বাক্ষর দিতে হয়। ব্যবসায়  উদ্যোক্তা যত বেশি উদ্ভাবন সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাবেন, তিনি তত সহজে উন্নতি অর্জন করতে পারবেন।

 ত্যাগী মনোভাব (Sacrificing mentality): 

একজন ব্যবসায়  উদ্যোক্তার মধ্যে অবশ্যই ত্যাগ- তিতিক্ষার  মনোভাব এবং পুঁজি বা মূলধন তৈরির করার যথাযত ক্ষমতা থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়  উদ্যোক্তার জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত  করেন নতুন নতুন পণ্য  আবিষ্কার উন্নয়ন, নতুন বাজার তৈরি অন্যান্য সৃজনশীল কাজে। এজন্য ব্যবসায়  উদ্যোক্তাকে বড় ধরনের বিনিয়োগ ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে হয়। তাই উদ্যোক্তাকে তার লক্ষ্যার্জনের সাথে যেকোনো ত্যাগ - তিতিক্ষা মনোভাবের জন্য  প্রস্তুত থাকতে হয়।

 উচ্চ মনোবল আত্মবিশ্বাস (High morale and confidence):

 আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিকে তার  কাজের প্রতি আন্তরিক মনোভাব  ও আগ্রহী করে তোলে। প্রতিষ্ঠানের  গঠন পরিচালনার জন্য যে কর্মদক্ষাতা দরকার তার জন্য ব্যবসায়  উদ্যোক্তার মনোভাব  দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় তার জন্যবিভিন্ন  ধরনের  সমস্যা  মোকাবিলা করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। 

সুযোগ সন্ধানী (Opportunity searcher):

সফল  ব্যবসায় উদ্যোক্তাগণ দেশের  চলমান  অর্থনেতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো নির্ধারণ করে তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হাসিলের কাজে  ব্যবহার করেন। শুধু নিজের  ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস  না করে তার আশপাশে যে  সুযোগ- সুবিধাগুলো  নিয়ে সামনে অগ্রসর হন  যান। তবে তারা মনে করেন, ভাগ্য উন্নতি  লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; তবে সুযোগ সুবিধাগুলো  যদি ঠিকঠাক কাজে লাগানো না যায় তাহলে ভাগ্যও কোনো কাজে আসে না।

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব (Attractive personality)

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বএর   ব্যবসায় উদ্যোক্তাগন  নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে  তার অনুকরণকারীদের  দিয়ে কাজ  করিয়ে নিতে হয়। এজন্য তার ব্যক্তিত্ব মোহনীয় বা. আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। এতে সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এভাবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে উদ্দেশ অর্জনে সহায়তা করে থাকে।

 সামাজিক দায়িত্ব পালন (Performing social responsibility): 

একজন উদ্যোক্তা নিজের সাফ্যলের পাশাপাশি সমাজের জন্যঅন্যান্য  কাজও  করে থাকেন। ব্যবসায় উদ্যোক্তার  কাজের ভিতর দিয়ে সমাজে  যেন কল্যাণ বয়ে আনে , তাকে সেভাবে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি শিল্প স্থাপন করার মাধ্যমে সাধারণত  কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা তৈরি করেন।তিনি  সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের ঘাটতি  পূরণ করার জন্য নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন   এছাড়াও তাকে সমাজের উন্নতি সাধন , ভেজাল প্রতিকার-প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা  প্রভৃতির মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়।

  সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা (Decision making ability):

 সঠিক সময়ে সঠিকভাবে যুক্তিমূলক  সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যবসায়  উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সম্ভাব্য সবধরনের  সুযোগ-সুবিধা সমস্যা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে যুক্তিমূলক  সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হয়। সফল ব্যবসায়  উদ্যোক্তা মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

 নিষ্ঠা আন্তরিকতা (Devotion and sincerity): 

কাজের প্রতি দৃঢ়ভাবে  অনুরাগ, আচরণগত, দায়িত্ব  ভরসাকে নিষ্ঠা বলে। ব্যবসায়  উদ্যোগ কাজে উন্নতি করতে  হতে হলে  উদ্যোক্তাকে তার কাজে অনুরাগ আন্তরিক হতে হবে। সব পরিস্থিতিতেই তাকে তার কাজে অটল অবিচল থাকতে হবে। এতে সুষ্ঠু সফলভাবে কাজ করা সহজ হবে।

 যোগাযোগে দক্ষতা (Communication skill):

  উদ্যোক্তাকে প্রতিষ্ঠানের ভেতর বাইরের বিভিন্ন পক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। আর এই যোগাযোগের মাধ্যমেই তিনি নতুন নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ আবিষ্কার ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য উদ্যোক্তাকে আধুনিক প্রচলিত বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে তার উদ্যোগকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারবেন।

 সংগঠিতকরণের দক্ষতা (Organizing ability): 

ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে তার প্রতিষ্ঠানের সব মানবীয় বস্তুগত উপকরণসমূহ সংগ্রহ পরিকল্পিতভাবে তা সমন্বয় করতে হয়। এজন্য তাকে সংগঠিতকরণের জ্ঞান দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এতে তার সম্ভাব্য সুযোগের সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে। অতএব বলা যায়, ব্যবসায় উদ্যোগ হলো একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। এতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।

 

 

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন