![]() |
| ব্যবসায়ে পরিবেশ |
আসসালামু
আলাইকুম, কেমন আছেন আপনি?, আশা
করি আপনি ভাল
আছেন। দেশী টিপস ব্লগ সাইডে এ আপনাকে স্বাগতম।
আজকে আপনাকে জানাযার চেষ্টা করব ব্যবসায়ী পরিবেশ কি? পরিবেশ কাকে বলে।ব্যবসায়িক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি? এবং
ব্যবসায় পরিবেশের বৈশিষ্ট্য। তার আগে জানতে হবে ব্যবসায় পরিবেশ কাকে বলে।ব্যবসায়িক পরিবেশ বলতে বোঝায় একটি দেশের।রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক আইনগত ও প্রযুক্তিগত
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার
মধ্য দিয়ে গঠিত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়
তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।
ব্যবসায়ের
ওপর পরিবেশ কখনও যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মসুর
অনুকূল প্রভাব ফেলে, আবার কখনও তা হয় প্রতিকূল।
ব্যবসায়ের ওপর পরিবেশের এ প্রভাব বসবাস
ও জীবন-বারণ করে আগে থেকে অনুমান করা যায়। ফলে, এর অনুকূল প্রভাবকে
কাজে লাগানো ও প্রতিকূল প্রভাবকে
মোকাবিলা বা এড়িয়ে চলা যায়।
নিচে
ব্যবসায় পরিবেশ নিয়ে কয়েকজন মনীষীর সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
■ আমেরিকার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর উইলিয়াম এফ.
(বিল) মুয়েক
লেখক
লরেন্স আর, জস (William F. (Bill)
Glueck and Lawrence R. Jauch) বলেছেন,
The environment includes factors outside the firm which can lead to opportunities for or threats to the firm. অর্থাৎ, 'প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন প্রশ্নবিত হয় সেগুলোর সংখ্য
উপাদান যা প্রতিষ্ঠানের জন্য
সুযোগ সৃষ্টি করে বা ক্ষতিকর, সেগুলোর
সমন্বয় হলো ব্যবসায় পরিবেশ।'
■ যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ের
অধ্যাপক ডোনাল্ড সি. মসলি ও তার সহযোগীদের
(Mosley, and others) মতে,
'Organizational environment is the combination of factors or elements that
influence the way an organization functions
ব্যবসায়ের পরিবেশের"
অর্থাৎ 'সাংগঠনিক পরিবেশ হলো কতগুলো উপাদানের সমষ্টি যেগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রমকে (ব্যবসায়ের পরিবেশের)
প্রভাবিত করে।'
অতএব,
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ যেসব
প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান
দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত
হয়, সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।
ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানসমূহ
Elements of Business Environment
ব্যবসায়ের
গঠন ও কার্যাবলির যেসব
প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান
সার্বিকভাবে প্রভাবিত
হয়, সেগুলোর সমষ্টিই হলো ব্যবসায় পরিবেশ। সাধারনভাবে ব্যবসায় পরিবেশের
ওপরই নির্ভর
করে কোনো অঞ্চলের ব্যবসায়ের উন্নতি বা অবনতি ।
ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানসমূহকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যেমনঃ
![]() |
| ব্যবসায় পরিবেশের |
ব্যষ্টিক/অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (Micro/Internal environment):
ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিরাজমান যেসব উপাদান ব্যবসায়ের পরিবেশ ওপর
সরাসরিভাবে প্রভাব
ফেলে, সেগুলোর
সমন্বয় হলো ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ। এ পরিবেশের উপাদানগুলোর
সঠিক বাস্তবায়ন ব্যবসায়কে দ্রুত এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের বিষয়গুলো হলো-
§ ১.মালিকানা
ও অংশদারী
§ ২.পরিচালনা
কমিটি
§ ৩.শ্রমিক
ও কর্মীচারী
§ ৪.প্রতিষ্ঠানের
অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধা
§ ৫.প্রতিষ্ঠানের
নিজস্ব নীতিমালা
§ ৬.ব্যবসায়ের
আর্থিক বিষয়াবলী ।
খ. সামষ্টিক/বাহ্যিক পরিবেশ (Macro/External environment):
ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানের বাইরের যেসব উপাদান সার্বিকভাবে ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব
ফেলে, সেগুলোর
সমনবয়কে ব্যবসায়ের বাহ্যিক পরিবেশ বলে। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ হাসিল এবং পরিবর্তিত অবস্থা নিয়ন্ত্রণের
জন্য
বাহ্যিক পরিবেশের উপাদানগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। ব্যবসায়ের বাহ্যিক পরিবেশকে নিম্নোক্ত দুই শ্রেনীতে ভাগ করা যায়-
ব্যবসায়ের কর্ম পরিবেশ (Task environment):
সাধারণত ব্যবসায়ের কর্ম পরিবেশ গড়ে ওঠে ব্যবসায়ের বাইরের সেসব ব্যক্তি বা পক্ষর সমন্বয়ে যারা ব্যবসায়ের কাজের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
এ যুগের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা বাজারে বেচে থাকতে হলে ব্যবসায় পরিবেশের সব বাহ্যিক দিকগুলি বিবেচনায় রাখা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ের কর্ম পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া ও সেই সাথে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অবস্যই বিবেচনায় রাখতে হবে । ব্যবসায়ের পরিবেশের উপাদানগুলো হলো-
· ১. প্রতিযোগীতাপৃ্র্ণ
· ২.ক্রয়কারী
বা বিক্রয়কারী ,
· ৩.জোগানদাতা
,
· ৪. মধ্যস্থাতা
ব্যবসায়ী,
· ৫.সরকারি
সংস্থা
· ৬.দক্ষতা
ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশ (General environment):
সাধারণতভাবে , ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশ
বলতে
বোঝায় পরিবেশের যেসব বাহ্যিক উপাদান বা শক্তি ব্যবসায়ের ওপর
প্রভাব বিস্তার করে, সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশ বলে। ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জন্য ব্যবসায়ের সাধারণ
পরিবেশের প্রভাব সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে অবস্যই বিবেচনায় রাখতে হবে ।
নিচে ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশের উপাদানগুলো হলো-
১.ব্যবসায়ের সাধারণ পরিবেশ
· ২.প্রাকৃতিক
পরিবেশ
· ৩.অর্থনৈতিক
পরিবেশ
· ৪.সামাজিক
পরিবেশ
· ৫.সাংস্কৃতিক
পরিবেশ
· ৬.রাজনৈতিক পরিবেশ
প ৭.ধর্মীয় পরিবেশ
· ৮.আইনগত
পরিবেশ
· ৯.প্রযুক্তিগত
পরিবেশ
ব্যবসায়ের পরিবেশের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
কোনো দেশের ভূ-গোলিক অবস্থান আবহাওয়া ও জলবায়ু মৃত্তিকাবলী, নদ-নদী, আয়তন, ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি উপাদানের সমন্বলিতভাবে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে, তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।এ পরিবেশ হলো এমন সব উপাদানের মাধ্যমে তৈরি, যা মানুষের দ্বারা তৈরি করা সম্ভব নয়। নিচে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো-
ভূ-প্রকৃতি (Physiography):
ভূ-প্রকৃতির ভিন্নতার
জন্য ব্যবসায়িক
কার্যবলিতেও অমিল দেখা
যায়। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল, সমতল ভূমি
ও মালভূমি- এ তিন ধরনের
ভূমি রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহের অঞ্চলের কিছুটা
অংশ নিয়ে তৈরি মালভূমি ।
বাকি অঞ্চল পলিমাটি সঞ্চিত সমতল ভূমি। এর মধ্যে রয়েছে হাওর,
বদ্বীপ এলাকা নিচু
জলাভূমি, সমুদ্র উপকূলীয় সমভূমি ও দ্বীপ অঞ্চল, রয়েছে। ভিন্ন
ধরনের ভূ-প্রকৃতিতে
ভিন্ন ধরনের ভালো মানের ফসল ভালো ফলন হয়।
আবার নির্দিষ্ট জমিতে একাএর
অধিক ফসলের ভালো
ফলন হলে, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান
পণ্যকে ব্যবসায়ীরা বাছাই করতে পারে।
জলবায়ু
(Climate):
আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্যেই বিভিন্ন এলাকার মানুষের শিল্প- ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে অমিল দেখা যায়। অনুকূল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এশিয়া মহাদেশের জাপান, ইউরোপের যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশকে শিল্প ও ব্যবসা -বাণিজ্যে উন্নত হতে সাহায্য করেছে। এছাড়া জনগণকে করেছে সু-স্বাস্থ্যর অধিকারী, কর্মশীল ও বুদ্ধিমান। আবার, আবহাওয়া ও ভূ-গোলীক কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতি সাধন দেখতে পাওয়া যাই না । অন্যদিকে, আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন, নদীভাঙ্গন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোণ ,অতিখড়া, অনাকাঙ্খিত বন্যা লবণাক্ততা বাড়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্যে অনেকে ব্যবসায়ই ব্যবসায় না করার সিদ্ধান্ত দেয় বা পরিবর্তন করে ফেলে সিদ্ধান্ত নেয় ।
সাগর ও নদ-নদী (Sea and rivers):
নদী পথে তুলনামূল্ক সহজে ও কম খরচে জিনিসপ্ত্র এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে আনা-নেওয়া করা যায়। এজন্য বিশ্বের অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসা -বাণিজ্যে এলাকা নদী বা সমুদ্রকে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিমিত্তে পর্যটন শিল্পে উন্নতসাধ্ন হলেও নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান ভূ-বেষ্টিত রাষ্ট্র হওয়ায়র জন্য বৈদেশিক মুনাফা লাভে খুব বেশি সুবিধা করতে পারচ্ছে না । অন্যদিকে, যথেষ্ট পরিমাণে সমুদ্রবন্দর থাকার কারণে সিঙ্গাপুর এক্ষেত্রে বেশখানি এগিয়ে র্যেছে । বিশ্বের নামকরা বাণিজ্যিক শহর ও বন্দর যথা: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ, চীনের সাংহাই, জাপানের টোকিও প্রভৃতিতে নদী ও সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থানের কারণেই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হতে পেরেছে ।
দেশের আয়তন (Area of the country):
একটি দেশের আয়তন সে দেশের ব্যবসা
-বাণিজ্যের ওপর
ব্যাপকভাবে প্রভাব
বিস্তার করে ।
দেশের আয়তন কম হলে যেখানে-সেখানে
শিল্প-
কারখানা তৈরি করা যায়
না। আবার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে বাণিজ্যিক
অঞ্চল ও গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পরে । অপরদিকে, দেশের আয়তন অনেক বেশি হলে এসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতা র সাথে কাজকরা যায় । আবার, বিস্তৃত অঞ্চল শিল্পের কাঁচামাল স্বাভাবিকভাবেই
বেশি থাকে। এভাবে দেশের আয়তনের ওপর ব্যবসা -বাণিজ্যের বিষয়াবলি কিছুটা
হলেও নির্ভর করে।
বনজ
সম্পদ (Forest
resources):
যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্য বনজ সম্পদের ভূমিকা অপরিমেইয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য দেশের মোট বনজ সম্পদের ২৫% বনভূমি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে বনজ সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১১%। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকারর বনভূমিতে কাঠ, বাঁশ, , গোলপাতা ,বেত, মধু, বন্য প্রাণীর চামড়া প্রভৃতি বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। আর, এগুলোকেই কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ এর ব্যবসায়।
জলজ
সম্পদ (Water
resources):
যে কোনো দেশের অর্থনীতির
জন্য জলজ সম্পদের ভূমিকা ও অপরিসীম। যেমন:
মৎস্য সম্পদকে কেন্দ্র
করে নরওয়ে ব্যবসায়ে বেশ উন্নতি সাধন করতে পেরেছে। আবার, বৃষ্টি বেশি হয় এমন জলবায়ু
অঞ্চলে
অবস্থিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য নদ- নদী, নালা, খাল ,বিল, হাওর ও জলাশয় রয়েছে
যেখানে প্রচুর পরিমাণে
বিভিন্ন প্রকারের মাছ
পাওয়া যায়। এসব সু সাধু প্রকারের
মাছ
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যথিত ও বিদেশে রপ্তানি করে।প্রচুর মুনাফা আয় কারা যায়।
প্রাণিজ
সম্পদ (Livestock
resources):
একটি দেশের প্রাণিজ সম্পদ দেশের ব্যবসা -বাণিজ্যের সমৃদ্ধির জন্য বড় একটি নিয়ামক। বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদের মধ্যে রয়েছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি । গবাদিপশুর মাংস, হাঁস, মুরগির মাংস ও ডিম এর খাদ্য খুবই পুষ্টিকর । এছাড়া, গবাদি পশুর চামড়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুনাফা আয় হয়ে থাকে।
কৃষি
(Agriculture):
ব্যবসা
–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কৃষি
ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান
দখল করে আছে। এদেশের প্রধান কৃষিজাত পন্য হলো ধান,
পাট, তামাক, চা, ইক্ষু, কার্পাস তুলা, গম, তৈলবীজ ও ডাল। এসব
ফসলের ওপর কেন্দ্র করে
এদেশে পাট, চা, চিনি, কার্পাস, বয়ন, সিগারেট প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেছে। ফলে, দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
খনিজ সম্পদ (Mine resources):
খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্যবসা –বাণিজ্যের বিস্তারে ক্ষেত্রে
সহায়তা করে। যেমন: চীন, রাশিয়া কয়লা ও আকরিক লৌহের
কারণে সেখানে লৌহ ও
ইস্পাত ব্যবসা –বাণিজ্যের প্রসার গড়ে
উঠেছে। আর, বাংলাদেশে খনিজ সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, কঠিন শিলা, চুনা পাথর, শ্বেত মৃত্তিকা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। দেশের উত্তোলনকূত গ্যাস
মূলত সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন
এবং রান্নার কাজে
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সমুদ্রসৈকত (Seabeach);
সমুদ্রসৈকত একটি
দেশর বা অঞ্চলের ব্যবসায়ের
চিত্র
পাল্টে দিতে পারে। যেমন: ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসা –বাণিজ্যের উন্নতি সাধনে সমুদ্রসৈকতের
অবদান অনেক বেশি। অপরদিকে,বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতের
অবস্থান হলো
বাংলাদেশে।
ব্যবসায়ের পরিবেশের ওপর অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদানের প্রভাব কোনো দেশের অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, মূল্ধন জনগণের আয় ও সঞ্চয়, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ অর্থনৈতিক পরিবেশ দেশের অর্থ ও যথাযত ঋণ ব্যবস্থা, সঞ্চয়, বিনিয়োগ প্রভৃতির সমন্বয়ে সৃষ্ট পরিবেশ প্রভৃতি অর্থনৈতিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয়, তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে। অর্থ হচ্ছে যে কোনো ব্যবসায়ের মূলশক্তি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানের উন্নতিসাধন হলে ব্যবসা –বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক বিস্তার লক্ষ করা যায়। আর, আর্থিক অবস্থানের অবনতিতে ব্যবসা –বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মন্দাভাব দেখা দেয়। ব্যবসায়ে অর্থনৈতিক পরিবেশই সাধারনত একক আধিপত্ত বিস্তার করে। তাই, সর্বদা অর্থনৈতিক পরিবেশের উন্নয়নে সচেষ্ট থাকা উচিত। নিচে অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদানের প্রভাব আলোচনা করা হলো-
সঞ্চয় ও বিনিয়োগ (Savings and investment):
সাধারনত, সঞ্চয় ও
বিনিয়োগ এর মাধ্যমে দিয়ে অর্থনৈতিক
পরিবেশের ভিত্তি শুরু হয় । ব্যবসা –বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের ক্ষেত্রে লোকজনের মধ্যে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের ইচ্ছা থাকতে হয় । আর, সঞ্চয়ের
পরিবর্তে ভোগে-বিলাসীর প্রবণতা
বেশি হলে প্রয়োজনীয় মূলধনের না থাকলে সেখানে নতুনধ রনের ব্যবসা
– বাণিজ্যের প্রসার কঠিন হয়ে পড়ে।
মূলধন বা পুঁজি (Capital):
ব্যবসায়ের
জন্য নিয়োজীত টাকা , অর্থ
ও অন্যান্য সম্পদকে মূলধন বলে। ব্যবসায়ীরা মূলধন
বা পুঁজির সংস্থান কীভাবে করবেন, তা দেশে বিদ্যমান
ব্যাংক ব্যবসায়ে ব্যবহৃত অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ
ব্যবস্থা ও পুঁজি বাজারের
ওপর নির্ভর করে। যে কোনো দেশের উন্নত
মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজারের উপস্থিতি
সে দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যবসা করার জন্য
উৎসাহিত
করে। আবার, পুঁজির ব্যবহার কম
হলে ব্যবসা –বাণিজ্যের বিস্তার দ্রুত
ও সহজ হয় । আর,
মূলধন বা পুঁজির ব্যয়
বেশি হলে ব্যবসা –বাণিজ্যের খরচ বেড়ে
যাওয়ায় ব্যবসায় সংকীর্ণ হতে থাকে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (Financial institutions):
বিভিন্ন
প্রকারের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান
যথা: ব্যাংক, বিমা ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের
আধিক্য এবং তাদের সম্পদ ও
ঋণ ব্যবস্থার নীতির কারণেও
ব্যবসা –বাণিজ্যের অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রভাব
পরে। যে সব অঞ্চলে
প্রচুর পরিমানে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ধরনের
ব্যবসা সহজেই প্রসারিত হয়। আর, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান
ঘাটতির
কারণে ব্যবসা –বাণিজ্যের প্রসারিত হতে বাধাপ্রাপ্ত
হয়।
অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা (Money and loan system):
ব্যবসায় শুরু করা ও
পরিচালনার জন্য সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থার নীতি ব্যবসায়ের জন্য পুজি হিসেবে
ব্যবহৃত হয়। যে সমাজে সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থার নীতির সরবরাহ সহজ
ও যথাযথ,সেই সমাজে শিল্প- ব্যবসা –বাণিজ্যে অতি প্রসারিত
হয়।
অপরদিকে, দুর্বল সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থার নীতি ব্যবসায়ের সুযোগকে সংকীর্ণ
করে ফেলে। এজন্য,প্রায় সব দেশের সরকারই
সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থার নীতি সুষ্ঠুরূপে গড়ে তুলে শিল্প- ব্যবসা –বাণিজ্যে জন্য
অনুকূল
পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা
করে।
মাথাপিছু আয় (Per capita income):
যে দেশে সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থা নীতির সুষ্ঠুরূপে গড়ে তুলা হয়েছে,সেসব দেশ মাথাপিছু
আয়ের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে , সেই সাথে দেশর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উন্নত সাধনও হয়ে
থাকে। এই মাথাপিছু আয়ের
বাড়তির কারণে
ভোগে বিলাসিতার পরিমাণ ও অনেক বেড়ে
যায়।পাশাপাশি উক্ত আয়ের একটি বিশাল অংশ
সার্বিকভাবে ব্যবসা –বাণিজ্যে
ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ হয়। ফলে, তা ব্যবসা বিস্তরের ক্ষেত্রে সাহায্য
করে।
উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা (Production and distribution system):
সরকারিভাবে
নিয়ন্ত্রীত
উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা চালু
থাকলে
ব্যক্তিমালিকানা ব্যবসায়ের বিস্তরের ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, যে দেশে মুক্ত
উৎপান্ন ও বিতরণ ব্যবস্থার প্রচলন চালু আছে, সে দেশে ব্যবসায়ের বিস্তর অতি সহজে হয়ে থাকে।
ভোগ
ও ব্যয়ের পরিমাণ (Amount of
consumption and expense):
যে সমাজ ব্যবস্থ্যয় সাধারণ জনগণের ভোগ বিলাস ও খরচের মাত্রা বেশি, সে সমাজ ব্যবস্থ্যয় ব্যবসা–বাণিজ্যে দ্রুত বিস্তারণ হয়। আর,যেখানে সম্পদ আত্নসাৎকৃত করে রাখার প্রবণতা বেশি, সেখানে ব্যবসা –বাণিজ্যে দ্রুত বিস্তারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
মুদ্রাবাজার (Capital
market):
দেশের মুদ্রাবাজারের পরিস্থিতি, গতি-প্রকৃতি, নিয়ম-কানুনের আনুকূল্যতা প্রভৃতি ব্যবসায়ের অর্থনৈতিক পরিবেশকে অনুকূল করে তোলে। আর, এর প্রতিকূলতা বিরূপ পরিবেশের জন্ম দেয়। ফলে, ব্যবসায়ের অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
শেয়ারবাজার (Share market);
যে সংগঠিত বাজারে শেয়ার ও ঋণপত্র কেনা-বেচা হয়, তাকে শেয়ারবাজার বলা হয়। দেশের শেয়ারবাজার ব্যবস্থা ও এর গতি-প্রকৃতি অর্থনৈতিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গঠনমূলক শেয়ারবাজার শিল্প-বাণিজ্যকে অনেকভাবে অনুপ্রাণিত ও বিকশিত করে তুলতে পারে। আবার, শেয়ারবাজারে অনৈতিক প্ররোচনা ও প্রভাব নতুন বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহী করে ফেলে।
শ্রমশক্তি
বা মানবসম্পদ (Human
resource):
মানবসম্পদের প্রাচুর্যতা ও সহজপ্রাপ্যতা দেশের ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের একটি অপরিহার্য উপাদান বা চালিকাশক্তি। কেননা, মানব সম্পদ অন্যান্য সব সম্পদকে কার্যকর করে তোলে। সুস্থ, নিষ্ঠাবান ও দক্ষ শ্রমশক্তির ওপর শিল্পের সাফল্য নির্ভর করে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দেশের জন্য বড় সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাজার ব্যবস্থা (Market system):
মুক্তবাজার অর্থনীতি এলাকায় ব্যবসায়ের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে ও নতুন নতুন
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। আর, সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়ীরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না। তাই, ব্যবসায়ে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
মুদ্রাস্ফীতি
ও মূল্যস্তর (Inflation and
price level);
দ্রব্যমূল্যের দীর্ঘকালীন উর্ধগতিকে মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। যেখানে স্থিতিশীল অর্থ ব্যবস্থা বজায় থাকে, সেখানে ব্যবসায়ীরা জন্যমূল্যের দীর্ঘকালীন উদগতি সহজেই ব্যবসায়ের প্রসার ঘটাতে পারে। আর, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় বা মূল্যস্তর অনেক বেশি ওঠানামা করে, সেখানে অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায় গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
জাতীয় বাজেট ও কর কাঠামো
(National budget and tax structure);
সরকারের জাতীয় বাজেট ও কর কাঠামো যদি শিল্প-বাণিজ্যের অনুকূল হয় তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে ও ব্যবসায়ের বিস্তার ঘটে। আর, বাজেট ও কর কাঠামোতে শিল্পের সুবিধা কমলে দেশে ব্যবসায়ের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে বিনিয়োগ দেশের বাইরে চলে যায় এবং অনেকেই ব্যবসায় গুটিয়ে ফেলে।

.png)