আত্মকর্মসংস্থান কি

আত্মকর্মসংস্থান কি

আত্মকর্মসংস্থান কি

 


আত্মকর্মসংস্থানের সংজ্ঞা

Definition of Self Employment


আত্মকর্মসংস্থান শব্দটির মধ্যেই এর প্রকৃত অর্থ নিহিত আত্ম মানে নিজ, কর্ম মানে কাজ আর সংস্থান মানে ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থান বলতে স্ব-উদ্যোগে নিজের কর্মের ব্যবস্থাকে বুঝিয়ে থাকে। সহজ ভাবে বলা যায় নিজের জীবিকা নিজের প্রচেষ্টাতে অর্জনের উপায়ই হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজস্ব উদ্যোগে যখন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তখন তাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় নিজ নিজ পেশা বেছে নেয়া সম্ভব। এজন্য প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। বেকার ব্যক্তিবর্গ এরূপ ব্যবসায়ে নিজেকে নিয়োজিত করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। যেমন- গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগির খামার, ফুল-ফলের এবং শাক-সব্জির বাগান, মৎস্য চাষ ছোট-খাটো দোকান এবং পোশাক তৈরি ইত্যাদি।

আত্মকর্মসংস্থান একটি বহুল প্রচলিত অর্থনৈতিক কাজ যার ফলে অন্যান্য পেশার তুলনায় স্বতন্ত্র কিছু যেমন- এটা একটা স্বাধীন পেশা, এক্ষেত্রে আয় এবং পারিশ্রমিক হতে পারে। তাছাড়া বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে এবং এখানে পণ্য বা সেবা উভয়ই বিক্রয়

আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগী মন, প্রবল আত্মবিশ্বাস ও স্বল্প প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নিজস্ব দক্ষতাকে কাজে •


উৎস বা ঋণ থেকে স্বল্প পুঁজির সংস্থান করে সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তাধারা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও লাগিয়ে সীমিত ঝুঁকি গ্রহণ করে নিজ বা আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। সংক্ষেপে বলা যায় অর্থ-উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীনভাবে নিজেই নিজের জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে নেয়াকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।




 আত্মকর্মসংস্থান পেশার বৈশিষ্ট্য

Features of Self Employment Profession

 

অন্যের অধীনে চাকরি না কারে অধিক উপার্জনের আশায় নিজের দক্ষতা ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে স্ব-উদ্যোগে সৃষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন। আয়ের উপায় খুঁজে নেওয়াই হচ্ছে আত্ম কর্মংসংস্থান। তাই আত্মকর্মসংস্থান বলতে মূলতঃ বাবসায়। করাকেই বুঝায়। আত্মকর্মসংস্থানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে ছকে উপস্থাপনপূর্বক আলোচনা করা হলোঃ



১। স্বাধীন জীবিকা (Free livelihood): স্বাধীনতা চেতা বা অন্যের অধীনতা যার পছন্দনীয় নয় তিনি নিজের বিবেচনায় হা ভালো মনে করেন তাতেই আত্মনিয়োগ করেন। ব্যবসায়ের মতো আত্মকর্মসংস্থানও একটি স্বাধীন জাবিকা। এক্ষেত্রে বাক্তি নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে কোনো সৃজনশীল কর্মে নিয়োজিত হয়ে স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। 


২। আত্মনির্ভরশীলতা (Self dependent): আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে একজন লোক অন্যের নির্ভরশীল না হয়ে নিজের উদ্যোগে আয় রোজগার করতে পারে। অর্থাৎ এর মাধামে একজন ব্যক্তি নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারে।


৩। ব্যক্তিক যোগ্যতা (Personal ability): যে ব্যক্তির উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষমতা, প্রবল আত্মবিশ্বাস, মেধা ও দক্ষতা, মানসিকতা ইত্যাদি গুণাবলি আছে তিনিই আত্ম কর্মসংস্থানমূলক কাজে সফলতা অর্জন সৃজনশীল মন এবং ঝুঁকি গ্রহণের করতে পারে।


৪। স্বল্প পুঁজি (Very small capital): আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্বল্প মূলধন নিয়েই একজন ব্যক্তি জীবিকা অর্জনের পথ খুঁজে নিতে পারে।


৫। স্ব-উদ্যোগে সৃষ্ট পেশা (Profession creates by self preparation) আত্মকর্মসংস্থানের মূল কথাই হল অন্যের অধীনে কোনো কিছু না করে নিজের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় কাজ করে স্বীয় জীবিকা নির্বাহ করা। অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের কাজের ব্যবস্থা নিজেই করে থাকে।


৬। অর্থসংস্থান (Finance): আত্মকর্মসংস্থানমূলক কোনো প্রকল্প সৃষ্টি ও পরিচালনার জন্য ন্যূনতম পুঁজির সংস্থান করতে হয়। ব্যক্তি নিজের তহবিল ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে আত্ম কর্মসংস্থানমূলক  প্রকল্পে বিনিয়োগ করে।


 ৭। আইন শৃংখলার উন্নয়ন (Development of law and order): আত্মকর্মসংস্থান দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী করে আয় অর্জনে সক্ষম করে। ফলে তাদের মধ্যে শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে দেশে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি হ্রাস পায় এবং দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।


৮। স্বাধীন পেশা (Free profession) একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় । তাই এটি একটি স্বাধীন পেশা। এক্ষেত্রে কারো নিকট কোনো প্রকার দায়বদ্ধতা থাকে না।


৯। ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা (Risk & uncertainty): আত্মকর্মসংস্থান মানে ব্যবসা। আর ব্যবসায় মানে হলো ঝুঁকি গ্রহণ করা। তাই ব্যবসায়ীদের মতো আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যক্তি নিজস্ব দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা এবং দূরদর্শিতার মাধ্যমে বুকি ও অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। 


১০। কর্ম সময় (Work time): আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা কার্যের কোনো নির্দিষ্ট সময় বা দিন থাকে না। ব্যক্তি স্ব-প্রণোদিত হয়ে সারাক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।


১১। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন (Brining dynamism in rural economy)ঃ হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু ও মৎস্য খামার এবং ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প স্থাপন করে একদিকে যেমন বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা যায় অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার সহজতর হয়।


১২। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের উন্নয়ন (Development of Small Business/ Industry): আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশার মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র শিক্ষা ও ব্যবসায়ের উন্নয়ন সাধন সহজতর হয়। ফলে বেকার জনগোষ্ঠী দেশের আনাচে-কানাচে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে এতে দেশের অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন সহজতর হয়।


১৩। কর্মক্ষেত্র (Field of Work/ Scope) : উৎপাদনমূলক, ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এবং সেবা প্রদানকারী যে কোনো ধরনের আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি নিয়োজিত হতে পারেন। ক্ষুদ্র শিক্ষা ও পেশায় আত্মসংস্থানমূলক দখল করে আছে।


১৪। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ (Removing unemployment and poverty): গ্রামের বেকার যুবক-যুবতী এবং দরিদ্র অথচ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে নিয়োজিত থেকে দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


 ১৫। জীবিকা অর্জনের প্রত্যাশা (Expectation for livelihood): আত্মকর্মসংস্থান জীবিকা, তথাপি দরিদ্র বিমোচন এবং যদিও একটি স্বাধীন ব্যবসায় কেন্দ্রিক বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প করে। তাই আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের মাধ্যমে জীবন ধারণের জন্য সম্মানজনক জীবিকা অর্জন করে।


১৬। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা (Government and private patronage): আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশার ক্ষেত্রে সরকারসহ বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি সংস্থা এমন কি এনজিও নানাবিধ সাহায্য সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে থাকে। 


১৭। জনগণের শহরমুখী প্রবণতা হ্রাস (Reducing tendency of people to be urbanised): আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পের উপকরণসমূহ শহরের তুলনায় গ্রামে সহজলভ্য বিধায় এ সমস্ত প্রকল্প গ্রামেই বিকাশ লাভ করে। ফলে গ্রামের মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

অতএব কর্মসংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান দেশের পালন করে।



 আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন ক্ষেত্র/ পরিধি

Various Fields/Scope of Self Employment


বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের বহু ক্ষেত্র রয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়। ব্যবসায়ই হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থানের মূল উপায়। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ব্যক্তি সীমিত আর্থিক সামর্থ্য ও কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো না কোনো ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপন করে এদেশের বেকার যুবসমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা কর। প্রকৃতি অনুযায়ী আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পের আওতাকে নিম্নোক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ


উৎপাদনমূলক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প (Productive self employment projects): নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যে সকল ব্যক্তি বা উদ্যোক্তাগণ কাঁচামাল বা প্রাকৃতিক সম্পদের রূপগত পরিবর্তন সাধন করে মানুষের ব্যবহার্য কোনো দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কোনো ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা স্থাপন করেন তখন তাকে উৎপাদনমূলক আত্মকর্মসংস্থান বলে। নিম্নে উৎপাদনমূলক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম প্রদান করা হলো:


১। হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা; ২। সব্জি গান তৈরি; ৩। ফুল ও ফলের চাষ; ৪। গবাদি পশু পালন; ৫। মৎস্য চাষ বা মাছের পোনা তৈরি; ৬। নার্সারি প্রতিষ্ঠা ও বনায়ন; ৭। রেশম চাষ; ৮। বাঁশ ও বেতের নানান ধরনের কাজ; ৯। মৃৎ শিল্প তৈরি; ১০। হস্ত শিল্প তৈরি; ১১। পোশাকে নকশা তৈরি: ১২। মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য তৈরি; ১৩। ব্লক, বাটিক, প্রিন্টিং: ১৪। পাটি বুনন যা শীতল পাটি তৈরি; ১৫।কম্পিউটার কম্পোজ, ডিজাইন তৈরিখ ইত্যাদি বাস্তুত। ১৮৯ বাংল তৈরি: ১৭। বিদুক শিল্প তৈরি: ১৮। তাঁত শিল্পের সাহায্যে শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর, টেবিল কথাচিকোর সিভিল ১৮। মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহ তৈরি কি তৈরিঃ ২১। লবণ উৎপাদন শিল্পঃ ২২। প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী। ২৩। কাঠের আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদি।


ক্রয়-বিক্রয়মূলক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প (Trade oriented self employment projects উৎপাদির পণ্য দ্রব্য ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবিকা অর্জনের লক্ষ্যে যখন কেউ কোনো দোকান বা বাণিজ্যির  প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে তখন তাকে ক্রয়-বিক্রয় মূলক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প বলা হয়। নিম্নে এরূপ আত্মসংস্থানমূলক প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হলো ও ১ রাকাপড়ের নৌকানাই। মনিহারির দোকান ৩। কাঁচা তরি-তরকারির দোকান। ৪। তামামাণ গৃহস্থালির জিনিসপত্রের বিক্রয়: ৫। কৃষকদের সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। যেমন- সেচ ব্যবস্থা, কীটনাশক ঔষদ ছিটানো মেশিন, ফসল মাড়াই কল ইত্যাদি; ৬। কুটির শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত মালামাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা ইবাদি


সেবা প্রদানমূলক আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প (Service oriented self employment project)বিস্তির পেশাজীবিদের সেবা প্রদানমূলক কর্মপ্রয়াসকে সেবা প্রদানকারী আত্ম কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প বলে। 

ফটোগ্রাফ করা;  ইলেকট্রিক ওয়্যারিং:  লুটী ও সেলুন ইত্যাদি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান;

কম্পিউটার কম্পোজ, ডিজাইন ও মুদ্রণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান; চাল, ডাল, তেল, আটা-ময়দা ইত্যাদি ভাঙ্গানো কল; মোবাইল, ঘড়ি ইলেকট্রিক সামগ্রীর মেরামত;  রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশন মেরামত;  রেডিও, টিভি, ভিসিপি মেরামত ইত্যাদি।



 আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব/ প্রয়োজনীয়তা

Importance/ Necessity of Self Employment


বিশ্বায়নের প্রভাবে ব্যবসায় আজ এক জটিল রূপ ধারণ করেছে। বিশ্ব বাজারে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ফলে দিন দিন মানুষ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্য পীড়িত জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ। অধিক জনসংখ্যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। জনগণের তুলনায় এদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। তাছাড়া অশিক্ষা, দক্ষ জনশক্তির অভাব, মূলধনের দুষ্প্রাপ্যতা, বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট ইত্যাদির কারণে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো সম্ভাব হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার লোক বেকার। এরূপ অবস্থায় দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। তাই এক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। নিম্নে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:


দারিদ্র্য দূরীকরণ (Elimination of poverty) বাংলাদেশের ৮৭% লোক দারিদ্র দীমায় নিচে বসবাস করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে আমাদের দেশে সম্পদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় দারিদ্রতার পরিসীমা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আত্মকর্মসংস্থান সারা ঘড়া দেশে মার্চের বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী তাদের আয় অর্জনের পথ খুঁজে পেতে পারে। এতে তাদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্রতাও হ্রাস পাবে। 


মানৰ সম্পদ উন্নয়ন (Developing human resources) দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা যায়। আত্মকর্মসংস্থান কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানব সম্পদে উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে।


 বেকারত্ব দূরীকরণ (Elimination of unemployment) ঃ বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না ফলে এদেশ বেকার সমস্যায় জর্জরিত। দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে আত্মকর্মসংস্থানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। এতে সমাজের অধিক সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পায়। 


 সঞ্চয়ে উৎসাহ দান (Encouraging savings): সামান্য অর্থ দিয়ে যেকোনো ব্যক্তি আত্মকর্মসংস্থান মূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে বিধায় বেকার লোকদের অনেকেই আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হয়। এতে সহজেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। সুতরাং সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধিতে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। 


 জনশক্তির সদ্ব্যবহার (Proper utilization of manpower): জনশক্তি একটি দেশের সম্পদ হিসেবে গণ্য হয় যদি ব্রাকে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু জনসংখ্যাকে কাজে না লাগাতে পারলে তা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে। আত্মকর্মসংস্থান দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন আয়অর্জনকারী প্রকল্প সৃষ্টিতে উৎষাহিত করে তাদেরকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করে। ফলে দেশের সমন্ন জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়।


জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন [Increasing Hving standard): আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্ম প্রচেষ্টা মানুষের জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি আর্থিক সঙ্গতিও বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটে।


 দ্রুত শিল্পায়ন (Rapid industriallzation): আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নিজেদের জীবিকা অর্জনের জন্য দেশের আনাচে কানাচে ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। তাদের এরূপ সৃজনশীল কর্ম প্রচেষ্টার ফলে দেশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। ফলে দেশে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটে। 


আইন শৃংখলার উন্নয়ন (Developing law and order): প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা বিভিন্ন প্রকার কাজের সংস্থান করে বেকারত্বের ফলে সমাজের লোকজনের মধ্যে অপরাধ নাশকতামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকার লোকদের দেশের শান্তি শৃংখলার উন্নয়ন সম্ভব। 


প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Proper utilization of natural resources): একটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন নির্ভর করে ঐদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহারের উপর। পরিমাণ ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান revenues): আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ডের ফলে দেশে প্রচুর এবং ব্যবসায় সংগঠন গড়ে ওঠে। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার এ সকল প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করলেও পরবর্তীতে সকল প্রতিষ্ঠান হতে খাজনা, কর, ভ্যাট ইত্যাদি বাবদ প্রচুর রাজস্ব আদায় করাতে পারে। ফলে সরকারের রাজস্ববৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণও এর সুফল ভোগ করতে পারে। অর্থনৈতিক


উন্নয়ন (Economic development): আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। ফলে মোট দেশীয় উপাদান বৃদ্ধির পাশাপাশি মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহজতর হয়।


 শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন (Development of education and culture): দেশের সাময়িক সচ্ছলতার উপর নির্ভর করে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়ন। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশেছিন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায় বেকার জনগোষ্ঠী তাদের যে তারা শিক্ষা ও পায়। ফলে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিন হিদা মিটিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে যা দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন