| সমবায় সমিতি |
সমবায় সমিতি
Co-operative Society
ভূমিকা
Introduction
নিপীড়িত, নিগৃহীত, নিরন্ন ও ভাগ্য বঞ্চিত মানুষের মুক্তির আন্দোলনের একটি নাম সমবায়। সমবায় শব্দের অর্থ হচ্ছে সহযোগিতা। বেঁচে থাকার তাগিদে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করলেও পৃথিবীর কোনো সমাজের মানুষই সুষম অধিকার ভোগ করতে পাবে না। বিশ্বের প্রতিটি মানুষই সর্বদাই দুটি দলে বিভক্ত। একদল সম্পদশালী আর অন্য দলটির নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। আর সম্পদশালীরা বিনিয়োগ, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আরও বেশি সম্পদের অধিকারী হচ্ছে আর সম্পদহীনরা তাদের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
আজ তাই নিজেদের জীবনের বাঁক পরিবর্তনের জন্য এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা থেকে সমবায় ব্যবস্থাটির উৎপত্তি হয়েছে। সমবায় একটি আদর্শ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এখানে প্রতিটি সদস্য অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একজন অন্য জনকে সহযোগিতা করে। সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে সমবায় সংগঠন দানা বাঁধনে ও এর বাস্তব রূপ লাভ করে শিল্প বিপ্লবের পর। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে কারিগর ও প্রশিক্ষণ সমম্মিলিতভাবে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে। এখান থেকেই সূচনা হয় সমবায়ের পদযাত্রা।
সমবায় সমিতির সংজ্ঞা
Definition of Co-operative Society
'আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।' উপরের কবিতার এ চরণদ্বয়ই সমবায়ের মূলমন্ত্র। ইংরেজি Co-operat' শব্দ হতে 'Co-operative' শব্দের উৎপত্তি। Co-Operate শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'সহযোগিতা' আর Society শব্দের অর্থ হচ্ছে সমাজ বা সমিতি। সুতরাং Co- operative Societyদর অর্থ দাঁড়ায় সহযোগিতা সমাজ। সাধারণত সমবায় সমিতি হলো কতিপয় ব্যক্তির স্বেচ্ছ্য সম্মিলন এর মাধ্যমে গঠিত একটি আইনানুগ প্রতিষ্ঠান (যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম অধিকারের ভিত্তিতে নিজেদের অর্থনৈতিক বৈষয়িক কল্যাণ ও উন্নততর জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে সমাজের নিম্ন আয়সম্পন্ন ব্যক্তিগণ একত্র হয়ে পারস্পরিক প্রচেষ্টার দ্বারা অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য যে সংগঠন করেন তাকে সমবায় সমিতি বলে।
নিম্নে সমবায় সমিতির কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞার উল্লেখ করা হলোঃ
F Striekland বলেন- "Co-operative indicates the association of individuals to secure cominon econonuc objective and by honest means." অর্থাৎ " সমবায় হচ্ছে সদুপায়ে সম-অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যক্তিবর্গের একটি সংঘ।"
Henry Calvert এর মতে, Co-operative is a form of organization where in the persons voluntarily associate together as human being on the basis of equality for the promotion of economie interest of themselves. (অর্থাৎ "সমব্যয় হচ্ছে এমন এক ধরনের সংগঠন যেখানে সমতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ C.
Co-operative Ordinance 1984 এর বলা হয়েছে, Co-operative society means a society
registered or deemed to be registered under this Ordinance. (সমবায় সমিতি হচ্ছে এ জাতীয় একটি সমিতি, যা অত্র অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিবন্ধিত বা নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হয়ে থাকে।)
সমবায় সমিতির উদ্দেশ্য
Objectives of Co-operative Society
সংবদ্ধতা (Organising):
সমবায় সমিতির প্রথম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সমশ্রেণীর লোকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা। তাদের সমস্যা সম্বন্ধে সচেতন করে গড়ে তোলা। সংঘবদ্ধ ছাড়া কোনো উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভবপর নয়। সমবায় সমিতি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য কাজ করে।
আর্থিক কল্যাণ (Economic welfare):
নিছক মুনাফা অর্জন নয় বরং সমবায়ীদের আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করণের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হবার জন্য সমবায় সমিতি সদস্যদের প্রয়োজনে ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণদান মুখী সুবিধা অর্জনের জন্য, উৎপাদক, ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমবায় গঠিত হয়ে থাকে।
উৎসাহিত করা (Motivation):
জীবনযুদ্ধে পরাজিত হতাশাগ্রস্ত মানুষদের আশার বাণী শুনিয়ে কাজে উৎসাহিত করাও সমবায়ের একটি উদ্দেশ্য। সমবায় সমিতি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, বেঁচে থাকার ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়।
ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি (Creating unity and solidarity)
সমবায়ের মূলমন্ত্র হলো একতাই বল (Unity strumathi, এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী যাতে সে বিষয়ে পারশারিক কলগে সামনে এদিকে আদে সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেও সমবায় গঠিত হয়।
আত্মনির্ভরশীলতা (Self dependency)
সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে এর সদস্যসমূহ সমিতিও প্রতিটি কর্মকর আত্মনিয়োগের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে। এছাড়াও সদস্যদের আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন গরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এরা যে কোনো ব্যবসায় গড়ে তোলার মানসিকতা আত্মনির্ভর হওয়ার প্রয়ানী হতে পারে।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা (To service in the competition)
কখনও কখনও পুঁজির উৎপাদনগণ তাদের উৎপাদন ও বিপণন কার্য চালাতে গিয়ে প্রতিযোগী পঞ্চগুলোর নিকট হতে প্রবল প্রতিযোগিতায় সমৃীন হতে হয়। এসাইল অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং নিজেদের সমষ্টিগত আর্থিক ও বৈষয়িক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়।
বৃহদায়তন ক্রয় সুবিধা (Advantages of large scale buying):
উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সহজ শর্তে ও ন্যায্যমূল্যে সংগ্রহ করার লক্ষে ক্ষুদ্র পুঁজির উৎপাদকগণ ক্রেতা সমবায় সমিতি গঠন করে। ফলে তারা বৃহদায়তন ক্রয় সুবিধা ভোগ করে।
সম্পদের সুষম বণ্টন (Proper distribution of wealth):
সম্পদ আহরণ ও সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে সমবায় সমিতির মুখ্য উদ্দেশ্য। সমবায় সমিতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদ আহরণ ও আহরিত সম্পদের সুষম বণ্টন করে
সঞ্চয়ের আগ্রহ সৃষ্টি (Creating interest in saving):
সমবায় সমিতির জীবনযুদ্ধে পরাজিত, হতোদ্যম লোকদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে শেখায়। ফলে ভবিষ্যতের আর্থিক সংগতির লক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করে।
নৈতিকতার উন্নয়ন (Development of morality):
সমবায় সমিতি মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বোধ জান্নাত করে। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যতা, শ্রদ্ধাবোধ, সদাচরণ ও শৃঙ্খলাবোধ রক্ষা ইত্যাদি করতে শেখায় সমবায় সমিতি। কারণ সমবায় ইত্যাদি বিষয়ে সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ফলে প্রতিটি সদস্য সুনাগরিক হিসেবে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
দক্ষতার উন্নয়ন (Development of efficiency):
প্রতিটি সদস্যদেরকে কর্ম উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে সমবায়। ফলে সমবায় জনগোষ্ঠী একটি দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়।
পুঁজিগত সমস্যার সমাধান (Solution to capital problem)
মূলধনের সমস্যার কারণে নিম্নবিত্তসম্পন্ন মানুষগুলো তাদের সামর্থাকে কাজে লাগাতে পারে না। কিন্তু সমবায় গঠনের মাধ্যমে এই নিম্নবিত্ত এই মানুষগুলোই সঞ্চয় করতে শুরু করে। আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো মিলে একটি বড় পুঁজির সৃষ্টি হয় এবং সমবায়ীদের পুঁজিগত সমস্যার সমাধান হয়।
সেবাদান (To provide service)
সমাজের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই নিম্নবিত্ত। এসব নিম্নবিত্ত সকল মৌলিক চাহিদা হতে বঞ্চিত। সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয়, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি বহুবিধ সেবার ব্যবস্থা করা সমবায়ের উদ্দেশ্য।
ন্যায্যমূল্যে পণ্য সামগ্রী সরবরাহ (Supply of goods at reasonable price):
জনগণ ন্যায্যমূল্যে পণ্যসামগ্রী সংগ্রহের লক্ষ্যে সমবায় সমিতি গঠন করে। সমবায় গঠনের মাধ্যমে বৃহদায়তন ক্রয় সুবিধা অর্জিত হয়। ফলে সমবায় সমিতি সদস্যদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করতে পারে।
কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা (To create employment):
বেকারত্ব দূরীকরণ ও অধিক পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সমবায়ের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সমবায় তার সদস্যকে সঞ্চয় হতে প্রাপ্ত মূলধন বিভিন্ন লাও জনক প্রকল্পে বিনিয়োগ করে অথবা নিজেরাই বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মীর প্রয়োজন হয়, এভাবে সমবায় গঠনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
নেতৃত্ব সৃষ্টি (Creating leadership):
সমবায় সমিতি সদস্যদের যারা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। এভাবে সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে যোগ্য ও পারদর্শী নেতৃত্ব সৃষ্টি করা সমবায়ের উদ্দেশ্য।
ঋণের সুযোগ সৃষ্টি (Creation of loan facility) :
সহজ শর্তে দরিদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র বাবসায়ীদেরকে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। সমবায় ব্যাংক, ঋণদান সমবায় সমিতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা (To face social problem):
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা করা সমবায় সমিতি গঠনের আরেকটি উদ্দেশ্য। সমবায়ভুক্তরা একতায় বিশ্বাসী। তাই পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাকৃতিক সমস্যা যেমন, স্বাস্থ্য সমস্যা, যৌতুক প্রথা, বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, খরা, বন্যা, মহামারী ইত্যাদি সহজেই সমাধা করতে পারে।
শিক্ষা বিস্তার (Broad of equcation):
নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর সাথে শিক্ষা আলো পৌছে দেওয়া সমবায়ের একটি উদ্দেশ্য। এ লক্ষে সমবায় সমিতি বিভিন্ন শিক্ষা বিস্তার কর্মসূচি যেমন: অক্ষরজ্ঞান প্রদান, স্বাস্থবিধি শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন শিক্ষা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করে।
সামর্থ্যের সমন্বয় (Co-ordinating ability):
সমবায়ের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের সীমিত স্বার্থকে একত্রিত করে বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে সমিতির তথ্য সদস্যদের আয় আরও বেড়ে যায়।
অত্যাচার প্রতিরোধ (Defense against disturbance):
পুঁজিপতি ও মহাজনদের অত্যাচার প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র উৎপাদকগণ উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়। এ ধরনের অত্যাচার প্রতিরোধ করার জন্য উৎপাদক সমবায় সমিতি গঠন করা হয়।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improving standard of living)
সমবায় সমিতি গঠনের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলো জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। এর ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য
Features of Co-operative Society
সাধারণ বৈশিষ্ট্য (Ordinary features) সমবায় সমিতির আইনগত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি যে সকল সাধারণ বৈশিদ্ধ বিদ্যমান নিচে যেগুলো আলোচনা করা হলো।
উদ্দেশ্য (Objectives) সমবায় সমিতির মূল উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন ও সার্বিক কল্যান নিশ্চিত করা। অন্যান্য ব্যবসায়ের N.C. Roy Chowdhury এ প্রসঙ্গে বলেছেন, I grupet of se sufficiency and services অর্থাৎ এটি হলো স্বনির্ভরতা অর্জনের ও সেবা করার মূর্ত প্রতীক।
গঠন প্রকৃতি (Nature of formation): আমাদের দেশে প্রচলিত ১৯৮৪ সমবায় আইন অনুযায়ী কতিপয় বৃতি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে এরূপ ব্যবসায় গঠন করে। এরূপ সংগঠনের সদস্যসমূহ সাধারণত স্বল্পবিত্ত সম্পন্ন হয়। সদসাগও যৌথভাবে মূলদন বিনিয়োগ করে এরূপ সংগঠন গঠন করে।
মূলধন সংগ্রহ (Collection of Capital): সদস্যদের স্বল্প সঞ্চয় হতেই সমবায় সমিতির মূলধন সংগৃহিত হয়। সংগঠনের মূলধনের কোডঠত নির্দিষ্ট সীমা নেই। তবে অনুমোদিত মূলধনের অতিরিক্ত মূলধন সমিতি গ্রহণ করতে পারে না। যৌথমূলধনী কোম্পানির ন্যায় সমবায় সমিতি সদস্যদের নিকট শেয়ার বিক্রি করে এর মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। এর শেয়ারের সর্বোচ্চ মোট শেয়ারের অংশ শেয়ার ক্রয় করতে পারে।
সমবায়ের নীতি (Principles of Co-operative): সততা ও পারস্পরিক বিশ্বাসই সমবায়ের মূল ভিত্তি বা প্রধান নীতি। এ নীতির ব্যতিক্রম হলে সমবায়ের অস্তিত্ব টিকবে না। সাধারণত নিম্নবিত্ত সম্পন্ন মানুষের আর্থিক মুক্তির জন্য সমবায় গড়ে তোলা হয়, আর এ ধরনের সংগঠন সাম্য, সততা, সংহতি, শান্তি, সেবা ইত্যাদি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঋণের সীমাবদ্ধতা (Limitation of credit): সমবায় সমিতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সমিতির সদস্য নয় এমন বাক্তিকে ঋণ প্রদান করা যাবে না এবং কোনো সদস্যকেও একটি সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমার অধিক ঋণ প্রদান করতে পারবে না।
সরকারি নিয়ন্ত্রণ (Govt. Control): সমবায় সমিতি একটি আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। ফলে সমিতির পরিচালনায় সরকারি আইনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এ ছাড়াও সমবায়ের উন্নতির জন্য সবকার এর সভা অনুষ্ঠান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিচালনা, হিসাবপত্র রক্ষণ ইত্যাদি বিষয় তত্ত্বাবধান করে। সরকার নিজ দায়িত্বে সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও আর্গিত অনার্থিক সহযোগিতা প্রদান করে।
ধর্ম নিরপেক্ষ (Secularism): সমবায় সমিতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সমবায় সমিতি এর সদস্যগণকে একত্রিত করে। সমবায় গঠনের মাধ্যমে পারস্পরির সমঝোতার সৃষ্টি হয় এবং ধর্ম নিরপেক্ষত্য অর্জিত হয়।
আইনগত বৈশিষ্ট্য (Legal features): সমবায় সমিতি একটি আইন সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাই এর বেশ কিছু বিধিবদ্ধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
সদস্য সংখ্যা (Number of members): ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইনের ৮-১ (ক) ধারায় বলা হয়েছে প্রথম সমবায় সমিতি গঠন করতে হলে কমপক্ষে ২০ (বিশ) জন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমবায় সমিতিতে ১০ (দশ) জন প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য থাকতে হয়। কিন্তু সমবায় সীমা উল্লেখ করা হয় নি। তাই এর কোনো উর্ধ্বসীমা নেই।
অবাধ সদস্য পদ (Open membership)দস্যপদ সকলের জন্যেই উন্মুক্ত থাকে। যে কোনো সমস্বার্থ বিশিষ ব্যক্তি সমিতিতে চাঁদা প্রদান করে বা শেয়ার এন করে এর সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ সদস্য পদ গ্রহণের জন্য কোন আইনগত জটিলতা নেই। তবে সদস্য ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবশ্যই য়াবনিক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হবে হবে।
পৃথক সত্তা (Separate entity) আইনের অধীনে নিবন্ধিত হওয়ার কারণে এর পৃথকর স্বাধীন দত্তার সৃষ্টি হা সমবায় আইনে এরূপ স্বাধীন বা ব্যক্তি সত্তা স্বীকৃত হয়েছে। এটি পৃথক ব্যক্তিসত্তার কারণে সর্বত্র নিজ নামে পরিচিত ও সীলমোহর বানহার করে পরিচালিত হয়ে থাকে। [১৪ (১) ধারা। ৪
নায় (Liability): সমবায় সমিতির সদস্যদের দায় অসীম। বা সসীম দুই-ই হতে পারে। বর্তমানে অধিকাংশ সমবায় সমিতি সসীম দায়ের ভিত্তিতে গঠিত হচ্ছে। এ ধরনের সমবায়ে সদস্যদের দায় তাদের ক্রয়কৃত শেয়ারের মূল্য যারা সীমাবদ্ধ থাকে।
শেয়ার ক্রয়সীমা (Limit of share purchase): সমবায় সমিতিতে যাতে কোনো ব্যক্তির বিশেষ অধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না হয় সেজন্য এক্ষেত্রে অবাধে শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয় না, কোন একজন সদস্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার। বা মোট শেয়ারের ১০ অংশের অধিক শেয়ার ক্রয় করতে পারে না। (১৫ (২ক) ধারা)
মুনাফা বণ্টন (Distributution of Profit): সমবায় সমিতিতে অর্জিত মুনাফার ১০০% সদসাদের মধ্যে বন্টন করা যায় না। অর্জিত মুনাফার ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৫% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করে বাকী অংশ সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ক্রমে শেয়ার গ্রহীতাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।। ৩৪ (১) ধারা)
শেয়ার হস্তান্তর (Transfer of share) সমবায় সমিতির শেয়ার সাধারণত হস্তান্তর অযোগ্য। তবে সসীন দায় সম্পন্ন সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি সাপেক্ষে শেয়ার হস্তান্তর করা যায়। অসীম দায়বদ্ধ সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তর করতে হলে-
নিবন্ধন (Registration): সমবায় সমিতি আইন সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বলে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। নিবন্ধনের পরপরই এ ধরনের ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তবে সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য কোনো নিবন্ধন 'ফি'র প্রয়োজন হয়। না।
সম ভোটাধিকার (Equal voting right): শেয়ার মালিকদের কেনা শেয়ারের উপর ভোটাধিকার নির্ভর করে না। সদস্যগণ যে যত শেয়ারই ক্রয় করুক না কেন, প্রত্যেক সদস্য একটির বেশি ভোট প্রয়োগ করতে পারে না। অর্থাৎ একজন সদস্য নির্ধারিত একটি ভোট প্রদানের ক্ষমতা রাখে একাধিক নয়।
হিসাব নিরীক্ষা (Audit of accounts): সমবায় আইন অনুযায়ী সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত হিসাব নিরীক্ষা কর্তৃক। সমবায় সমিতির হিসাব নিরীক্ষা করা আবশ্যক।
সাম্য (Equality): সমবায় সমিতি একটি স্বেচ্ছাকৃত সংগঠন। কতিপয় সমশ্রেগ্রীভূক্ত ও সমমনা লোক একত্রিত হয়ে। সমবায় গড়ে তোলে। তাই সমবায় সমিতিতে সকল সদস্যের অধিকার এবং মর্যাদা সমান থাকে।
সদস্যগণের পদমর্যাদা (Status of the members): সমবায় ব্যবসায়ে সকল সদস্যদের পদমর্যাদা সমান থাকে। কেউ শ্রমিক বা কর্মচারী এবং কেউ বস এরূপ এ ধরনের ব্যবসায়ে দেখা যায় না। শেয়ার যে পরিমাণই কেনা হোক না কেন সকলেই সমান মর্যদার অধিকারী হয়।
যোগ্যতা (Qualification): সমবায় সমিতির সদস্যপদ লাভ করতে হলে কোনো ব্যক্তিকে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়সী হতে হয় এবং ঐ ব্যক্তি সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নারী-পুরুষ যে কেউ হতে পারে। নাবালক কোনো অবস্থাতেই সদস্য হতে পারে না।
কার্যের পরিধি (Area of operation): সমবায়ের সদস্যগণ পরস্পরের সাথে পরিচিত এবং সমস্বার্থ বিশিষ্ট। পারস্পরিক মতাদর্শ ও হৃদ্যতার মধ্য দিয়ে এটি গঠিত হয়ে থাকে। সেজন্য এর কার্যের পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হতে পারে।
সমবায় সমিতির সুবিধা
Disadvantages for of Co-operative Society
উন্নত জীবন ধারনের সুযোগ (Scope of high standard of living) সমাজের বিত্তহীন ও নিম্ন বিন্তু সাম্পন্ন মানুষের আয় রোজগার বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে সমবায় সমিতি। ফলে সমাজের নিম্ন আয়ের জনগণের উন্নতৎ জীবন ধারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আর্থ- সামাজিক উন্নতি (Socio-economic progress): সমবায় গঠনের মাধ্যমে সদস্যগণের বেকারত্ব দূরীভূত হয়। ফলে সদস্যদের আর্থিক উন্নতি সাধিত হয় এবং সামাজিক শান্তি ও শৃংঙ্খলা নিশ্চিত হয়। জালে এটি সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে মজবুত করে।
মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের উৎখাত (Elimination of middlemen) সমবায় সমিতির সদস্যরা নিজেরাই পণ্য উৎপাদন করে এবং তাদের দ্বারাই বিক্রিত হয় ফলে ন্যায্য মূল্যে সকলে পণ্য ক্রয় করতে পারে। এতে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের নিকট হতে চড়ামূল্যে পণ্য জন্য করতে হয় না। ফলে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের উৎখাত ঘটে।
অধিক উৎপাদন (High Production) সমবায়ের সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করার চেষ্টা করে। এতে ব্যয় সংকোচন অর্জন হয়। তাই উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং অপরদিকে অধিক বিক্রয় বলে সদস্যগণ অধিক উৎপাদনে আগ্রহী হয়।
ব্যয় সংকোচন (Economy): সমিতিতে প্রত্যেক সদস্যদের স্বার্থ জড়িত থাকে। তাই প্রত্যেক সদস্য ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য সচেষ্ট হয়। ফলে উৎপাদন ও বণ্টন কার্যে ব্যয় সংকোচন করা সম্ভব হয়।
কর্মসংস্থানের সুযোগ (Employment Opportunity): সমবায় সমিতির সম্পসারণের জন্য পরিচালনা পরিষদ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এতে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে সদস্যদের কাজের সংস্থানের পাশাপাশি সমাজের বেকার লোকদেরও কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
কর মওকুফ (Tax-relief): দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক সমবায় সমিতির আয়ের উপর আয়কর প্রদান করতে হয়। না। ফলে সমিতির খরচ কমে এবং সদস্যদের আয় বাড়ে।
সঞ্চয় ও আয় (Saving and income): সমবায় সদস্যদেরকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে। ফলে সমবায়ীগণ সঞ্চয়ী হয়ে উঠে। আর সদস্যদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় হতেই গড়ে উঠে বিনিয়োগের বৃহৎ পুঁজি। এই পুঁজি বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে সংগঠন তথা সদস্যদেরকে আয় বৃদ্ধি করা যায়।
মূলধন গঠন (Capital formation): সমবায়ীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামর্থ্য একত্রিত হয়ে বৃহদায়তন ব্যবসায়ে গড়ে তোলা যায়। সদস্যরা যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে বলে বৃহৎ মূলধন গঠন সম্ভব। আবার সদস্যদের প্রত্যেকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ও বড় ধরনের মূলধন গঠনে সাহায্যে করে।
স্বাস্থ্য নির্ভরশীপ (Self reliance): সমবায়ের সদলারা কাজগুলোকে ভাগ করে নেয়। এর মাধ্যমে সমবায় সমিতির প্রত্যেকটি অভ্যাস গড়ে উঠে। ফলে সমবায় সমিতির প্রত্যেকটি সদস্য আছে- নির্ভরশীল হয়ে উঠে।
পরিচালনায় প্রশিক্ষণ (Training in administration): সমবায় সমিতির সদস্যরা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দাখে সংশ্লিষ্ট থাকে বিদায় এখানে হাতে কলমে ব্যবস্থাপনা শক্রোর প্রশিক্ষণের সুবিনা বিরাজ করে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শ্রমিক কর্মীদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ (Supply of goods at cheap price) সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ন্যূনতম মূল্যে পণ্য দ্য সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে এর সদস্যরা মধ্যস্থ বান সহায়তা ছাড়াই পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এতে তারা স্বল্পমূল্যে তো বটেই বরং ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাবার নিশ্চয়তা
সরকারি সাহায্যে (Government help) সমবায় সমিতি বিত্তহীন ও স্বল্প জনগোষ্ঠীর সংগঠন। এটি সমাজের বিত্তহীন ও স্বল্প আয়ের লোকদের আয় বৃদ্ধি করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে শুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সরকার সমবায়ীদের উৎসাহিত করা এবং দেশের অর্থনেতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সাহায্যে সহযোগিতা প্রদান করে।
নৈতিক শিক্ষা (Moral education) সমবায় সকল সময় একতা, সততা, সাম্য, দেবা, সহযোগিতা, শান্তি ও শৃঙ্খলা ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে। ফলে সমবায় সদস্যগণ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে।
আয়ের সুষম বণ্টন (Proper distribution of income) সমবায় ব্যবস্থা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের মধ্যে আয়ের সুষম বণ্টন করে থাকে। ফলে সম্পদ নির্দিষ্ট কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত হতে পারে না। এতে সমাজে শ্রেণী বৈষম্য দূরীভূত হয়।
গণতন্ত্র (Democracy): সমবায় সমিতি পূর্ণ গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে সকল সদস্যদের সম অধিকার বজায় থাকে। সদস্যরা সঞ্চলেই সমিতির পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই সমবায় সমিতি গণতন্ত্রের শিক্ষা কেন্দ্র বলে বিবেচিত।
গোপনীয়তা রক্ষা (Maintenance of secrecy): সমবায় সমিতি জনস্বার্থে পরিচালিত হয় এবং সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহনশীলতার মনোভাব বিদ্যমান থাকে বিধায় সমবায় সমিতিতে সকল ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব।
সাম্য (Equality): সমবায় সমিতি সাম্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়ে থাকে। এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এখানে সকলে সমান। এই সংগঠন সমাজের ধনী-ধরিদ্র সকলের মধ্যে সম্পদ সুষ্ঠু ও সমভাবে। বণ্টনের ব্যবস্থা করে।
কম পরিচালনা ব্যয় (Law administrative cost): সমবায় সমিতি পরিচালনার জন্য সদস্যবৃন্দের ভেতর হতেই পরিচালক নির্বাচন করা হয়ে থাকে। নির্বাচিত পরিচালকবৃন্দ স্বেচ্ছায় স্বল্প বেতনে এমনকি বিনা বেতনে সমিতি পরিচালনা করে বিধায় প্রশাসনিক খরচ কম হয়। তাছাড়া সদস্যগণ প্রতি ক্ষেত্রেই মিতব্যয়িতা অর্জনের চেষ্টা করে। ফলে পরিচালনা রায় হ্রাস পায়।
ঋণের সুযোগ (Loan facilities): সমবায় সমিতি একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হতে সদস্যগণ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। ফলে তাদেরকে মহাজনদের নিকট হতে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতে হয় না।
জীবন দর্শন (Code of life): সমবায় সমিতির আদর্শসমূহ মানব জীবনে উন্নতির জন্য অপরিহার্য। এর আদর্শসমূহ সঠিকভাবে অনুসরণের মাধ্যমে অর্জিত হয় মানবীয় ও অর্থনেতিক পরিপূর্ণতা। তাই সমবায়ের আদর্শসমূহ একটি আদর্শ জীবন দর্শন বলে বিবেচিত
সমবায় সমিতির অসুবিধা
Disadvantages for of Co-operative Society
জটিল গঠনপ্রণালী (Complexity of formation) দেশে প্রচলিত আইন মোতাবেক সমবায় সমিতি গঠন করতে হলে কতকগুল্যে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে এবং বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। ইচ্ছা করলেই এরূপ সংগঠন গঠন করা যায় না কারণ এর গঠন প্রণালী অনেক জটিলতাপূর্ণ।
মূলধনের স্বল্পতা (Lack of capital) সাধারণত নিম্নবিত্ত ও দারিদ্র জনগোষ্ঠীর সংগঠন বলে এ ধরনের সংগঠনে অনেক ক্ষেত্রেই মূলধনের স্বল্পতা বিরাজ করে। তাদের পক্ষে বৃহৎ পুঁজির সংস্থান করা সম্ভব হয় না। মূলধনের অপর্যাপ্ত তার কারণে এরূপ সংগঠনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্ম বাধাগ্রস্ত হয়। মূলধনের স্বল্পতার কারণে বৃহদায়তন কারবারি সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়।
সততার অভাব (Lack of honesty): সমবায় সমিতির পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেকের মধ্যেই সততার অভাব দেখা যায়। অনেক অসৎ পরিচালকগণ সমিতি হতে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। এতে সদস্যগণ তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত হয় এবং সমিতি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উৎসাহের অভাব (Lack of inspiration): এ ধরনের সংগঠন গঠনকালে এর সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা কাজ করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা কারণে এ উৎসাহ উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে। এছাড়াও এর কর্মকর্তাদের চাহিদামাফিক বেতন ভাতা প্রদান করা হয় না। ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহের অভাব দেখা দেয়।
সহযোগিতার অভাব (Lack of co-operation): সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে" এই নীতির উপর সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে এর সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার মনোভাব দেখা যায় না। ফলে সমিতি পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়।
অদক্ষ ব্যবস্থাপনা (Inefficient management): সমবায় সমিতি সাধারণ দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের নিয়ে গঠিত হয় তাই সদস্যগণ প্রায়ই অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত, তারাই সমিতির ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে। সমিতির মূলধন অপর্যাপ্ত থাকায় উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ সম্ভব হয় না।
সীমাবদ্ধ কার্যক্ষেত্র (Limited field of operation): আমাদের দেশের সমবায় সমিতির কার্যক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ। যেমন- হাঁস মুরগি পালন দুগ্ধ উৎপাদন, কৃষি কাজ, পশু পালন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ভোগ পণ্য, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এগুলোর বাইরে বৃহদায়তন উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সমবায় সমিতির যেমন ভূমিকা নেই বললেই চলে।
শেয়ার হস্তান্তরের অসুবিধা (Problems in the transfer of shares): সমবায় সমিতির সদস্যগণ তাদের শেয়ার অবাধে হস্তান্তর করতে পারে না। শেয়ার হস্তান্তরের জন্য পরিচালক পর্ষদের নিকট হতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। যা অনেকে ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সূত্রিতা ও জটিলতা সৃষ্টি করে।
মুনাফার অনিশ্চয়তা (Uncertainty of profit): সমবায় সমিতিতে মুনাফা অর্জনকে গৌণ উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। এরূপ ব্যবসায়ের মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ সদস্য তথা শেয়ার হোল্ডারগণের মধ্যে বন্টিত হয় না। যে কারণে মুনাফার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়।
স্বজনপ্রীতি (Nepotism) কেউ বড় কেউ ছোট নয় অর্থাৎ সকলেই সমান এই নীতি অনুযায়ী সমবায় সমিতি গঠিত হয়। কিন্তু বাস্তবে সর্বত্রই স্বজনপ্রীতি বিদ্যমান। ঋণদান, ঋণ পরিশোধের শর্ত ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমিতির পরিচালকদের পছন্দের লোকেরা অধিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। যা এদেশের সমবায় আন্দোলনে। বিরূপ প্রভার ফেলেছে।
ব্যক্তিস্বার্থ (Self interest): সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে সফলতা অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তি স্বার্থ বিদ্যার্জন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সদস্যগণ এবং পরিচালকগণ তাদের ব্যক্তি চরিতার্থের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ফলে সমবায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যাহত হয়।
কর্মে শৈথিল্য (Negligence to work): সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটি সামগ্রিক রূপ সমবায় এ ধরনের বাবসায় কোন বেতনভুক্ত নির্বাহী থাকে না। ফলে স্বেচ্ছাসেবী নির্বাহীদের মধ্যে অনেক সময় কর্তব্য কাজে অবহেলাও শৈথিল্য দেখা যায়। যা এব সম্ভাবনাময় অগ্রগতিকে প্রতিহত করে।
সরকারি নিয়ন্ত্রণ (Government control উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতা পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়ার পাশাপাশি সমিতির কাজ-কর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বহাল থাকে। যা স্বাধীন কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি করে এবং সমিতির গতিশীল কর্মকে শ্লথ করে দেয়।
নমনীয়তার অভাব (Lack of flexibility): যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ব্যবসায় সংগঠনকে নমনীয় হতে হয়। কিন্তু সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিষদ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। কেননা এখানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী পরিষদের সভা করতে হয়। যা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষে ব্যাপার।