আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ। আর ব্যবসার পরিবেশ হলো এই সমগ্র পরিবেশের একটা অংশ মাত্র। আরে বর্তমানে প্রতিযোগিতা পূর্ণ বাজারে ব্যবসার সফলতা অর্জন করতে হলে। ব্যবসা পরিবেশ উন্নত করা খুবই দরকার।
ব্যবসায় পরিবেশ কি?
বাংলাদেশের কোন গ্রামে একটা শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তার বেড়ে ওঠা লালন পালন লেখাপড়া জীবন জীবিকা চিন্তাভাবনার মান আর জাপানের একটা শিশুর জন্মগ্রহণ লালন পালন জীবিকা পড়ালেখা চিন্তাভাবনার মান সবকিছুই ভিন্নতর হবে। আর এই ভিন্নতার হওয়ার পিছনে উভয় দেশের পরিপাশেকতা দায়ী অর্থাৎ রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবেশ এর উপাদান সমূহ এই ভিন্নতার বাস্তবতার।
সেজন্যই বলা যায় যে প্রতিটি মানুষ আচার-আচরণ রীতিনীতি ভিন্ন চিন্তা ভিন্ন ভাব দ্বারা গড়ে ওঠার প্রধান কারণ হচ্ছে পরিবেশ। সেজন্যই মানুষ আজও পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের যেসব উপাদান ব্যবসা কে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করবার নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ব্যবসার পরিবেশ বলে। অর্থাৎ ব্যবসার ক্ষেত্রে যে অবস্থা একটি ব্যবসার সুফল ও কুফল বয়ে আনে সেটা সাধারণত ব্যবসার পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান
ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান গুলো হল। যথা:
(১)প্রাকৃতিক উপাদান,
(২)অর্থনীতি উপাদান,
(৩)সামাজিক ও সংস্কৃতিক উপাদান,
(৪)রাজনীতি ও আইনগত উপাদান,
(৫)তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপাদান,
(৬)আন্তর্জাতিক উপাদান,
(১)প্রাকৃতিক উপাদান।
প্রাকৃতিক পরিবেশের যে উপাদানগুলো ব্যবসার পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে সেগুলো শাহানাদা ব্যবসা প্রাকৃতিক উপাদান। ব্যবসার প্রাকৃতিক উপাদান গুলো হল ভূ প্রকৃতির জলবায়ু নদী সমুদ্র প্রাকৃতিক সম্পদ আয়তন জনসংখ্যা ইত্যাদি। এই উপাদান সময়ের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিত দ্বারা ব্যবসা কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কারণেই এইসব উপাদানের অনুকূল পরিবেশ যেখানে গঠিত হয় সেখানেই শিল্প কারখানা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান অধিক পরিমাণে গড়ে ওঠে।
(২) অর্থনৈতিক উপাদান
অর্থনৈতিক পরিবেশ কতগুলো উপাদানের সংজ্ঞা করলাম যা ভোক্তার পড়ায় ক্ষমতা প্রভাবিত করে। অর্থ বিনিময় মাধ্যমে ঋণ ব্যবস্থা সঞ্চয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে একটি দেশের শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটে অথবা অবনতি ঘটে। একটি দেশের জাতীয় আয় ভোগের পরিমাণ উৎপাদনে বন্টন গোয়ার মাথা ভেজা ইত্যাদির ওপর করে করবটা কি অর্থনৈতিক পরিবেশ।
(৩)সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান
সামাজিক ও সংস্কৃতবাদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা সংস্কৃতি ধর্মীয় রীতিনীতি মূল্যবোধ নীতি নৈতিকতা ইতিহাস ও ঐতিহ্য মনোভাব ও বিশ্বাস ।এই বিষয়গুলো দেশ দেশ থেকে দেশে মানুষ থেকে মানুষকে জাতি থেকে জাতিতে ব্যবসার পরিবেশকে প্রভাবিত করে।
(৪)রাজনীতি ও আইনগত উপাদান
একটি দেশের ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে রাজনৈতিক আইনগত উপাদান ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। কারণ কোন দেশের এই রাজনৈতিক ও আইনগত উপাদান যদি অনুকূলে থাকে তাহলে যেকোনো দেশের ব্যবসা দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করে। উপাদানগুলি যথাক্রমে রাজনীতি স্থিতিশীলতা সরকারের নীতিমালা আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি।
(৫)তথ্য প্রযুক্তিগত উপাদান
বর্তমান বিশ্বে হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর ।তাই যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করতে হলে অথবা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই প্রযুক্তিগত দিকগুলো ব্যবসার পরিবেশে ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তিগত উপাদান গুলো যথাক্রমে প্রযুক্তিগত শিক্ষা তথ্য প্রবাহ বিজ্ঞান ও গবেষণাগার ইত্যাদি।
(৬)আন্তর্জাতিক উপাদান
ব্যবসার আন্তর্জাতিক উপাদান গুলো হল আন্তর্জাতিক চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য নীতি আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা উন্নত দেশের সাথে সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ।
ব্যবসায়ের উপর পরিবেশের উপাদান গুলির প্রভাব
(১)মূলধন প্রাপ্তি
যে কোন ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমে যে বিষয়টা দরকার সেটা হচ্ছে মূলধন। কারণ সংগঠন ওয়াল কাপ যা করায় কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন অর্থ প্রয়োজন।উদার ঋণ নীতি এবংদুষ্ট শেয়ার বাজারের উপস্থিতি সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর মূলধন নির্ভরশীল। দেশে অনুকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে ব্যবসার মূলধন প্রাপ্তি সহজ হয়। আর অন্যদিকে অর্থনৈতিক পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে মূলধন প্রাপ্তির বিঘ্ন ঘটে। যা ব্যবসার বাধা সৃষ্টি করে।
২। কর কাঠামো :
দেশের বিরাজমান অনুকূল কর ও শুল্ক নীতি ব্যবসায়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেশে বিদ্যমান কর কাঠামোতে যেসব খাতে বা অঞ্চলে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায় স্থাপনে কর রেয়াত দেয়া হয়, সেসব খাতে বা অঞ্চলে দ্রুত শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। প্রতিকূল কর ও শুল্ক কাঠামো নতুন শিল্প স্থাপনকে নিরুৎসাহিত করার সাথে সাথে চালু শিল্প কারখানা ও ব্যবসায় কর্মকাণ্ডের ইতি ঘটায়।
৩। লাইসেন্স প্রাপ্তির:
দেশে শিল্প স্থাপন ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। শিল্প স্থাপনের এরূপ অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রাপ্তির সুবিধা বা অসুবিধা ব্যবসায়ী কার্যক্রমে যথাক্রমে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তাই দেখা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন ও লাইসেন্স প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতার নীতি ব্যবসায়ী উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করে। আবার এক্ষেত্রে ত্বরিত ব্যবস্থার নীতি শিল্প কারখানা স্থাপনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
৪। ভূমি প্রাপ্তির : শিল্প বা ব্যবসায় স্থাপনে যথাযথ সুবিধা সংবলিত ভূমি প্রয়োজন। সুষ্ঠু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা, বাজারের নৈকট্য, কাঁচামাল, শ্রমশক্তি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির সহজলভ্যতা সংবলিত ভূমি যথাযথ শিল্প স্থাপনের সহায়ক। অন্যদিকে শিল্প স্থাপনের উপযোগী ভূমির
অপর্যাপ্ততব্যবসায় কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে ।
৫। যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা : সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদান-যা ব্যবসায় বা শিল্পের প্রতিষ্ঠা ও এর অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা একদিকে যেমন কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য অপরিহার্য, অন্যদিকে উৎপন্ন পণ্য বাজারজাতকরণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আবার উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্যও একান্ত অপরিহার্য।
৬। বাজারে প্রবেশের : উৎপাদিত পণ্য অবাধে বিক্রয়ের সুযোগ তথা পণ্যের বাজার লাভের সুযোগ আরেকটি অর্থনৈতিক উপাদান যা শিল্পীয় উৎপাদনকে প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহিত করে। মূলত পণ্য উৎপাদিত হয় বাজারে বিক্রয়ের নিমিত্তে। এমতাবস্থায়, কোনো পণ্যের বাজার যদি একচেটিয়া বা নিয়ন্ত্রিত বা সংরক্ষণমূলক হয় তবে ঐ শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। অনেক সময় দেখা যায় পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট অথবা অন্য কোনো সরকারি নির্দেশ পণ্যের বাজারকে সংরক্ষিত ও সংকুচিত করে রাখে। এরূপ অবস্থায় ব্যবসায় কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
৭। ঋণ ও আর্থিক সুবিধা : ব্যবসায়ীগণ শিল্প স্থাপন এবং চলমান শিল্পে প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন যোগান দেয়ার নিমিত্তে অথবা সম্প্রসারণের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বা ঋণের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। এমতাবস্থায়, কোনো অঞ্চলে এরূপ মূলধন বা ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ না থাকলে ব্যবসায়ীগণ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। ফলে ব্যবসায় কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। আবার প্রয়োজনীয় ঋণ বা মূলধনের যোগান দেয়ার জন্য যে অঞ্চলে পর্যাপ্ত ব্যাংক।

Good information...
উত্তরমুছুন